একাত্তরের ঐতিহাসিক মার্চ মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ মাসের ২ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন । যাতে প্রচ্ছন্নভাবে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ঘোষণা দেন। ২৫ মার্চ রাতে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পর শুরু হয় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ । তিরিশ লাখ শহীদের মূল্যবান জীবন ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন । আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের ঐতিহাসিক মুহূর্তে। যে-মার্চ মাসে বাঙালির ইতিহাসে এতসব ঘটনা ঘটেছে, সেই মার্চ মাস নিয়ে প্রবীণ-নবীন। লেখক-গবেষক নানামুখী বিশ্লেষণ করেছেন। লিখেছেন তাৎপর্যপূর্ণ প্রবন্ধ । একাত্তরের ঐতিহাসিক মার্চ : শতপ্রবন্ধ সংকলন গ্রন্থে। মূলত মার্চ-সম্পর্কিত একশ প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হলো। এসব প্রবন্ধ থেকে মার্চে ঘটে যাওয়া । ঘটনাবলি সম্পর্কে পাঠক একটা পরিচ্ছন্ন ধারণা। পাবেন। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে এই সংকলন সহায়ক হবে ।
আবদুল গাফফার চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামে এক রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা হাজী ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার বরিশাল জেলা কংগ্রেস কমিটি ও খেলাফত কমিটির সভাপতি ছিলেন। অসহযােগ আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেন । গাফফার চৌধুরী যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র, তখন কবিতা লেখা শুরু করেন। ষষ্ট শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক নবযুগের ছােটদের পাতায় তার লেখা প্রথম ছাপা হয়। তারপর স্কুলের ছাত্র থাকা কালেই তার লেখা কলকাতার। সওগাত, ঢাকার সােনার বাংলা (অধুনালুপ্ত) পত্রিকায় ছাপা । শুরু হয় । এসএসসি পাশের পর তিনি ঢাকায় আসেন এবং সওগাত, মােহাম্মদী, মাহে লও, দিলরুবা প্রভৃতি মাসিক পত্রিকায় তার গল্প উপন্যাস ছাপা হতে থাকে। বাজারে তার বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস, ছােটদের এডভেঞ্চার কাহিনী, প্রবন্ধ সংগ্রহ, স্মৃতিকথা রয়েছে এবং পাঠক সমাজে আদৃত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ইউনেস্কো পুরষ্কার, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদক এবং একুশের পদক পেয়েছেন এবং বিদেশেও নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। তিনি অমর একুশের গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাের’ রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু-হত্যার উপর লেখা নাটক ‘পলাশি থেকে ধানমন্ডি’ দারুন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তিনি বহু সাহিত্য মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন । বেতার ও টেলিনাটক লিখেছেন। তবে বর্তমানে তিনি একজন সার্বক্ষণিক কলামিষ্ট । ঢাকায় চারটি জাতীয় দৈনিকে এবং লন্ডন ও নিউইয়র্কে একাধিক সাপ্তাহিক পত্রিকায় তার রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা কলাম নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তার কলাম দেশে-বিদেশে বাংলাভাষাভাষী পাঠকের কাছে দারুন জনপ্রিয়। গাফফার চৌধুরী এখন লন্ডনে বাস করেন। তিনি এক ছেলে চার মেয়ের পিতা। বঙ্গবন্ধুর জীবন নিয়ে একটি পূর্ণ দৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের কাজে তিনি এখন ব্যস্ত।