রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বই আসলে ধনী আর গরিবের মানসিক পার্থক্য নিয়ে লেখা। সেই সাথে লেখক শিখিয়েছেন, কিভাবে নিজের মানসিকতা বদল করে ধনী হওয়া যায়। ‘সুশীল’ সমাজের লোকেরা একটা কথা প্রায়ই বলেন, “পুঁজিবাদের কারণে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, গরীবেরা গরীব থেকে যাচ্ছে” ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট সেলার বই “রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড (Rich Dad Poor Dad)” এর লেখক রবার্ট কিওসাকি বলেন, এটা একদম ফালতু কথা। ধনীরা আরও ধনী হওয়ার পেছনে পুঁজিবাদের কোনও ভূমিকা নেই, ধনীরা ধনী হয় তাদের মানসিকতার কারণে, গরিবরাও গরিব থেকে যায় তাদের মানসিকতার কারণে। সঠিক পথে চিন্তা আর পরিশ্রম করলে, যে কেউ ধনী হতে পারে। মধ্যবিত্ত আর গরিবদের সাথে ধনীদের প্রধান পার্থক্য আসলে চিন্তা আর অভ্যাসে। মধ্যবিত্ত আর গরিবেরা তাদের ছেলেমেয়েদের এমন শিক্ষা দেয়, যার ফলে তারাও গরিব বা মধ্যবিত্ত থেকে যায়। অন্যদিকে যারা সত্যিকার ধনী, অর্থাৎ দুর্নীতি না করে নিজের চেষ্টায় যারা ধনী হয়েছে, তারা তাদের সন্তানের মানসিকতা এমন ভাবে গড়ে তোলে যাতে করে, তাদের সন্তানরা ধনী বাবা-মায়ের ধন সম্পদ আরও বাড়াতে পারে।
রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বইটি লেখক রবার্ট কিওসাকির নিজের জীবন থেকে লেখা। পুওর ড্যাড, অর্থাৎ ‘গরিব বাবা’ আসলে তাঁর নিজের বাবা, যিনি একজন উচ্চশিক্ষিত ডক্টরেট ডিগ্রীধারী, আর রিচ ড্যাড বা ‘ধনী বাবা’ তাঁর সবচেয়ে কাছের বন্ধু মাইক এর বাবা। ৮ম শ্রেণী পাশ করা রিচ ড্যাড একজন বিলিওনেয়ার হিসেবে মারা যান, এবং মৃত্যুর আগে তিনি নিজের ছেলে মাইক ও এই বইয়ের লেখক রবার্ট কিওসাকির মাঝে ধনী হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করে যান। রিচ ড্যাড যেসব আইডিয়া রবার্টকে শিখিয়েছেন, সেই আইডিয়াগুলো কি, এবং সেগুলো কাজে লাগিয়ে কিভাবে গরিব বা মধ্যবিত্ত মানসিকতা দূর করা যায়, এবং নিজের মাঝে ধনীর মানসিকতা নিয়ে আসা যায় – এসবই রবার্ট লিখেছেন তাঁর বেস্ট সেলার বইটিতে। রিচ ড্যাডের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে রবার্ট কিওসাকি আজ প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের মালিক। বাংলাদেশী টাকায় যা প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা! কিওসাকির মতে, কিছু নির্দিষ্ট শিক্ষা পেলে এবং নিজের চিন্তাকে বদলে ফেলে যে কেউ এমন ধনী হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক “রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড” এর মূল শিক্ষাগুলো।
জাপানী বংশোদ্ভূত লেখক রবার্ট তরু কিয়োসাকি বেড়ে উঠেছেন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে। সংক্ষেপিত নাম ‘রবার্ট টি. কিয়োসাকি’ দিয়েই তিনি অধিক পরিচিত। শৈশবকাল শেষ করে পড়াশোনার জন্য তিনি পাড়ি জমান নিউ ইয়র্কে। একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠার পর ইউ. এস. মেরিন কর্পসে যোগ দেন। এরপর পেশাজীবন তাঁকে নিয়ে যায় ভিয়েতনামে, মেরিন কর্পসের একজন অফিসার ও হেলিকপ্টার গানশিপের পাইলট হিসেবে। ভিয়েতনাম থেকে ফিরেই যাত্রা শুরু হয় এক যুদ্ধফেরত ব্যবসায়ীর। ১৯৭৭ সালে তিনি গড়ে তোলেন তার নিজের কোম্পানি, যা একইসাথে তাকে এনে দেয় অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক সফলতা। পরবর্তী সময়ে, ১৯৯৪ সালে তিনি ও তার সহধর্মিনী কিম কিয়োসাকি মিলে জন্ম দেন রিচ ড্যাড কোম্পানির। তারা এই কোম্পানিটির লক্ষ্য স্থির করেন- ‘মানবতার স্বার্থে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার উত্থাপন’। রবার্ট টি. কিয়োসাকির সেরা বই ধরা হয় ‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’কে। এটি সর্বসময়ের সবচাইতে জনপ্রিয়, ব্যক্তিগত এবং অর্থনৈতিক বই হিসেবে বিখ্যাত। লাখো মানুষের টাকা সম্পর্কিত ধারণাকে তিনি এই বইটির মাধ্যমে বদলে দিতে পেরেছেন। এছাড়াও ২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘বিফোর ইউ কুইট ইওর জব’ বইটিও নতুন উদ্যোক্তাদের নজর কেড়েছে। রবার্ট টি. কিয়োসাকি এর বই সমগ্র সাধারণত মোটিভেশনাল ঘরানার, তিনি নিজেও একজন সফল মোটিভেশনাল স্পিকার। মূলত পেশায় তিনি একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও কলামিস্ট। রবার্ট টি. কিয়োসাকি এর বই সমূহ এর মধ্যে রিচ ড্যাড সিরিজেরই ১৫টি বই প্রকাশিত হয়েছে। সবমিলিয়ে বিক্রিত কপির সংখ্যা ২৬ মিলিয়ন পেরিয়ে গেছে এবং এই বইটি প্রায় ৫১টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।