আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছিলেন: সব ভালো বই এ অর্থে একরকম যে তারা সত্যিসত্যিই ঘটতে পারতো এমন ঘটনার চেয়ে বেশি সত্য, পাঠশেষে পাঠকের মনে হয় এ সবই তার সঙ্গে হয়েছে, তার ভেতর দিয়ে ঘটেছে; এর পাঠে দিনশেষে পরমানন্দ কিংবা অন্তর্গত বেদনা বা অনুশোচনা অথবা কষ্টবোধ এবং স্থান-কাল-পাত্র সবই যেন তার একান্ত নিজস্ব। জাহিদ নেওয়াজ খানের গল্পে এরকম এক অনুভূতির ভেতর দিয়ে যান পাঠক। তার গল্প বলার ভাষায় পাঠক তরতরিয়ে এগিয়ে যান ঠিকই, কিন্তু সত্যিসত্যিই ঘটতে পারতো এমন ঘটনার চেয়ে বেশি সত্যের মুখোমুখি হয়ে চমকে ও থমকে যান। ‘শ্রাদ্ধবাসর’গল্প সংকলনের সাতটি গল্পই পাঠককে নিজের জগত থেকে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যায়, নতুন সে ছায়াজগতও উন্মোচনের মধ্য দিয়ে একসময় তার খুবই চেনা ও নিজস্ব; কিন্তু পাঠক হিসেবে বাইরে থেকে পরিভ্রমণের মধ্য দিয়ে কখন যেন তিনি প্রথমে এর মুখোমুখি হয়ে যান, পরে নিজে তার মধ্যে দ্রবীভূত কিংবা অন্তর্গত। এ বইয়ের সাতটি গল্প সাত ধরনের। তারপরও তাদের মধ্যে একটা সূত্রধর আছে। এর কারণ জাহিদ নেওয়াজ খান যে ঘটতে পারতো কিংবা ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর গল্প এখানে বলেছেন, তার সবগুলোতেই মুখ্য বিষয় রাজনীতি ও ক্ষমতা, আরো স্পষ্ট করে বললে রাজনীতি ও ক্ষমতার কদর্য দিক যা কোন ভৌগলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নয় এবং যার সঙ্গে আমাদের নিত্য বসবাস যেখানে নারীকে পুরুষের পাঁজর থেকেই জন্ম নিতে হয়, এর কোন ব্যত্যয় নেই। তিনি গল্পের কোথাও বলেন না যে ঘৃণার ডুবসাঁতার শেষে জীবন মানে খোলা আকাশে বুক ভরা নিঃশ্বাস যার ডাক নাম ভালোবাসা, কিন্তু পাঠ শেষে পাঠক হয়তো নিজেকে সেখানে দাঁড় করিয়ে সেটারই সন্ধান পান।
Zahid Newaz Khan: জন্ম ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ময়মনসিংহ শহরে। শৈশব এবং কৈশোর সেখানেই কেটেছে। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশায় সাংবাদিক, পেশাগত লেখাপড়া ভারত, জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রে। কলেজ জীবন থেকেই গল্প লিখতেন, তবে বই প্রকাশে দীর্ঘ সময় নিয়েছেন। পাঁচ বছর আগেও তার কোন প্রকাশিত বই ছিল না। আবিষ্কার প্রকাশিত তার অন্য বইয়ের মধ্যে আছে মূর্তিকারিগর (উপন্যাস) এবং দ্য গ্রিনম্যান (রম্য)। শ্রাদ্ধবাসর তার প্রথম গল্পগ্রন্থ।