আলোচ্য বিষয়ের সারসংক্ষেপ ‘ক্বলব’ শব্দটি প্রায় সকল মুসলিম জানে। তবে এর প্রকৃত শারীরিক অবস্থান ও কাজ সম্পর্কে নিরক্ষর, সাধারণ শিক্ষিত এবং ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ভুল ধারণা বিদ্যমান। এ ভুল ধারণা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর এর কারণ হলো মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা, বিশেষ করে ইসলামী শিক্ষার সিলেবাসের মহা দুর্বলতা। আল কুরআনের প্রচলিত প্রায় সকল অনুবাদ ও তাফসীর গ্রন্থ এবং প্রচলিত প্রায় সকল হাদীস গ্রন্থে ‘ক্বলব’-এর সংজ্ঞা, মানব শরীরে অবস্থান ও কাজ সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। অতীতে এটিতে তেমন সমস্যা না হলেও বর্তমানে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও বাড়বে। সমস্যাগুলো হলো- ১. একজন অমুসলিম চিকিৎসক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র বিষয়টি জানলে কুরআন ও হাদীস নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করবে। ২. একজন মুসলিম চিকিৎসক বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ছাত্র বিষয়টি জানলে কুরআনের নির্ভুলতা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাবে। ২. অন্যদিকে ক্বলব পরিষ্কার করা নিয়ে মুসলিম সমাজে যে ইবাদত বা আমল (যিক’র) চালু আছে, তা যথাযথ ফল দিচ্ছে না বা বৃথা যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের বর্তমান স্তর এবং কুরআনের জ্ঞান অর্জনের প্রকৃত মূলনীতি জানা থাকলে বিষয়টি জানা ও বোঝা মোটেই কঠিন নয়। পুস্তিকাটি ‘ক্বলব’-এর সংজ্ঞা, অবস্থান ও কাজ নিয়ে প্রচলিত ভুল বুঝাবুঝি নিরসনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এবং ফলস্বরূপ মুসলিম উম্মাহ ও মানব সভ্যতার ব্যাপক কল্যাণ বয়ে আনতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
Title
গবেষণা সিরিজ-৩৬ : মানব শরীরে ‘ক্বলব’-এর অবস্থান রপ্রচলিত ধারণা ও সঠিক তথ্য
প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমানের জন্ম বাংলাদেশের খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার আরজি-ডুমুরিয়া গ্রামের এক ধার্মিক পরিবারে। নিজ গ্রামের মাদ্রাসায় তাঁর শিক্ষা জীবন আরম্ভ। ছয় বছর মাদ্রাসায় পড়ার পর তাঁকে ডুমুরিয়া হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে তিনি যথাক্রমে ডুমুরিয়া হাইস্কুল ও সরকারী বি.এল কলেজ, দৌলতপুর, খুলনা থেকে কৃতিত্বের সাথে এস. এস. সি. ও এইচ.এস.সি পাস করেন। এরপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে MBBS পাস করেন। দ্বিতীয় ও ফাইনাল প্রফেশনাল MBBS পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাক্রমে ৬ষ্ঠ ও ১০ম স্থান অধিকার করেন। MBBS পাস করে তিনি সরকারী চাকুরীতে যােগ দেন এবং ১৯৭৯ সালে ইরাক সরকারের চাকুরী নিয়ে সেদেশে চলে যান। ৪ বছর ইরাকের জেনারেল হাসপাতালে সার্জারী বিভাগে চাকুরী করার পর তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান এবং ১৯৮৬ সালে গ্লাসগাে রয়েল কলেজ অফ ফিজিশিয়ান্স এন্ড সার্জনস থেকে জেনারেল সার্জারীতে FRCS ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে ফিরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে কনসালট্যান্ট হিসেবে যােগদান করেন। সর্বশেষ তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রফেসর এবং সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ল্যাপারােসকোপ (Laparoscope) যন্ত্র দিয়ে একক হাতে। (Single Handed) পিত্তথলির পাথর (Gall Bladder Stone) অপারেশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ সার্জন (surgeon)। প্রফেসর ডা. মাে. মতিয়ার রহমান চিকিৎসক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দীর্ঘ দুই দশক ধরে কুরআন গবেষক হিসেবে মৌলিক কাজ করে আসছেন। তাঁর গবেষণার বিষয় হলাে- ইসলামের সে সকল মূল বিষয় যা সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য এবং বর্তমান বিশ্বের মুসলিমদের জ্ঞান ও আমলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। ইতােমধ্যে তার লেখা ৩৯টি গবেষণাধর্মী পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। এসব পুস্তিকায় তিনি মুসলিম সমাজে প্রচলিত জ্ঞানগত ভুল ধারণার সংস্কার করে কুরআন, সুন্নাহ ও Common sense -এর আলােকে ইসলামের সঠিক তথ্য তুলে ধরেছেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কাজ হলাে ‘আল কুরআন যুগের জ্ঞানের আলােকে অনুবাদ’। এ অনুবাদখানির সম্পাদনা পরিষদের নেতৃত্ব তিনি দিয়েছেন।