“জেন্ডার ও মিডিয়া ভাবনা” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: সন্তান গর্ভে ধারণ, লালন-পালন এবং ঘরকন্নার কাজে ধীরে-ধীরে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পরিণতি হিসেবে নারী একসময় পেছনে পড়ে যায়। পুরুষতন্ত্র তখন নারীর সেই পিছিয়ে পড়াকে নানাছলে উৎসাহিত করতে থাকে। এভাবে সমাজে পুরুষতন্ত্র পেয়ে যায় শক্ত ভিত, যার নিচে চাপা পড়ে যায় নারীর ব্যক্তিগত সত্তা। নারী প্রতিষ্ঠা পায় দুর্বল, অক্ষম, অবলা হিসেবে। নারীর এই অধঃস্তনতার বলয় নারীর চোখে পরিয়ে দেয় এমন এক বায়বীয় চশমা যার দ্বারা খােদ নারী-ই তার পৃথিবীকে দেখে। পুরুষতান্ত্রিকতার চোখে- অথচ তা সে টেরই পায় না।। নারী-পুরুষ সম্পর্কের এই মিথ ও বাস্তবতাগুলােই আসলে গ্রন্থভুক্ত করতে চেয়েছে তরুণ লেখক মাধব দীপ।। আমি মাধবকে চিনতাম যােগাযােগ ও সাংবাদিকতার একজন ছাত্র হিসেবে। কিন্তু সমাজের বিভিন্ন নারীবাদী ডিসকোর্স নিয়ে তার চিন্তা-ভাবনা তাকে নতুনভাবে আমার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। তার লেখার স্টাইল ও চিন্তার ঘরানা ক্রিটিক্যাল। নারীকে ঘিরে সমাজের সর্বত্রগামী প্রাগৈতিহাসিক বৈষম্য যে আজও শক্তিশালীভাবে ক্রিয়াশীল- এ বােধের জাগরণ বইটিতে বেশ স্পষ্ট। অন্যকথায় বলা যায়- স্রেফ নারীর দেহকে পুঁজি করে একসময় চালু হওয়া নারীকেন্দ্রিক ভাবনার বলয় যে সমাজে এখনও সক্রিয় রয়েছে। বইটি পাঠে এই বিষয়টি পাঠককে ভাবিয়ে তুলবে। আমরা জানি- শব্দ আসলে চিন্তারই একধরনের ভাষিক অনুবাদ। মাধব দীপ নারী-পুরুষ সম্পর্কের নানামাত্রিক দৃষ্টিকোণ নিয়ে ভেবেছে, ভাবছে- এটা একজন পুরুষ হিসেবে কেবল নয়, একজন লেখক হিসেবেও তার। অগ্রসরতার সাক্ষ্য দেয়। প্রত্যাশিত নারী-পুরুষ বৈষম্যই সমাজভাবনারই অনুবাদ এই বই। প্রবন্ধ ও নিবন্ধগুলাের পরতে-পরতে এই ভাবনাটাই যেন নানাছলে সুগন্ধি বিলিয়ে গেছে। আবার হালের ম্যাস-মিডিয়ায় নারীর অসংবেদনশীল উপস্থাপন এবং নারীশরীরের চরম ভাপবাদী ব্যবহারের পুরুষতান্ত্রিক কৌশলও ওঠে এসেছে লেখাগুলােতে। এসেছে গণমাধ্যমকে ক্রিটিক্যাল এ্যাপ্রােচ থেকে দেখার বিভিন্ন পাঠও। এই বইটি নারী-পুরুষ সম্পর্কের রসায়নকে নতুন করে, নতুন পথে ভাববার উস্কানি দেবে অনেক পাঠককে একইভাবে মিডিয়ার বিভিন্ন ব্যবহার নিয়েও এমনকিছু বিষয় বইটিতে ওঠে এসেছে যেগুলােতে লেখকের মৌলিকত্ব ফুটে ওঠেছে। ‘বিয়ের কার্ডে নারীর চিত্রায়ণ’, ‘মাতৃত্বকাল কি নারীর অসুস্থতা?', “কবিগুরুর 'বীরপুরুষ': দুধের শিশু যখন মাকে রক্ষা করে", 'সােশ্যাল মিডিয়া যখন নতুন জাংক ফুড' -টাইটেলের লেখাগুলাে অন্তত এমনভাবেই মাধবের লেখাগুলােকে বিচার করতে প্ররােচিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। গ্রন্থটি সমাজভাবনায় কৌতুহলী মানুষের চিন্তার মুখকে নতুন দিক নির্দেশ করবে- এমন আশা আমি করতেই পারি।। এ ধরনের লেখায় মনােনিবেশ করার জন্য আমি লেখককে সাধুবাদ জানাই। একটা কথা আছে এরকম- “ফর এভরি, প্রমিজ, দেয়ার ইজ আ প্রাইস টু পে; আমি মনেকরি সমাজের প্রতি মাধবের যে দায়বদ্ধতা আছে এই বইটি তার কিছুটা হলেও পূরণ করবে।