প্রকৃতির সাথে লড়াই চলে না, সমঝোতা চলে। তাও যদি প্রকৃতির সম্মতি থাকে। বানরের গলায় যেমন স্বেচ্ছায় এবং নিজ দায়িত্বে ঝুলে থাকে বানরশাবক তেমনি করে হাওর অঞ্চলে প্রকৃতির গলায় ঝুলে থাকে হাওরের মানুষ। প্রকৃতির সাথে লড়াই করে ধনীর তকমা গায়ে নিয়ে টিকে থাকা মানুষ হাওরে দেখা যায় কদাচিৎ। প্রকৃতি ধনবানের প্রতি দুর্বল আর গরিবের প্রতি নির্দয়-এ সত্য মেনে নিয়েই হাওরের মানুষেরা বানরশাবকের জীবন বেছে নেয়। একসময় দিগন্তের পর দিগন্ত জুড়ে পড়ে থাকা চাষ-উপযোগী জমি আর মাছের লাফিয়ে লাফিয়ে নৌকায় উঠে পড়া দেখে যারা আশায় বুক বেঁধে অভিবাসী হয়েছিল তাদের উত্তর প্রজন্ম আজ আবার টিকে থাকতে অভিবাসী হয়ে চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যে কিংবা শহরে। যদিও অভাব বহুরূপী ধারণা। এক-এক মানুষের কাছে এক-এক রূপে ধরা দেয়। তথাপি অর্থনীতি বা মানবিক, যেদিক দিয়ে বিবেচনা করা হোক না কেন শেষ পর্যন্ত হাওরের মানুষদের অতীব দরিদ্র ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। শহুরে মানুষের মতো প্রেম, ভালবাসা, আভিজাত্য কিংবা লালসায় পূর্ণ অভাব নয়, সে অভাব বেঁচে থাকার নূন্যতম কাঁচামালের যোগানের অভাব। সে অভাব অজগর সাপের মতো শিকারকে জাপটে ধরে মোচড়মারা অভাব। হাওরের মানুষ তাই ঘুম না আসা মানুষের মতো এপাশ-ওপাশ করে জন্মাবধি জীবনযাপন করে।
মাসউদুল হক’র জন্ম ১৯৭৪ সালে ।। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় পদচারণা করলেও তার। আগ্রহের জায়গা মুলত: কথাসাহিত্য। তবে কথাসাহিত্যের নির্দিষ্ট কোন গণ্ডিতে নিজেকে আটকে রাখতে চাননা। ফলে তাঁর প্রতিটি গল্প বা উপন্যাসের বিষয়বস্তু হয় ভিন্ন। কথাসাহিত্যের প্রতিটি শাখায় কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে তিনি লেখালিখি করেন। প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন নতুন সাহিত্যিক চ্যালেঞ্জের। সামনে দাঁড় করানাে এবং সেই চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের চেষ্টাই মাসউদুল হকের সাহিত্য রচনার মূল প্রেরণা। পড়াশােনা করেছেন কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিভিল সার্ভিস কলেজ-এ। একাডেমিক পড়াশােনার বিষয় সমাজকর্ম এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক। তবে আগ্রহের বিষয় দর্শন, ইতিহাস এবং রাজনীতি। প্রথম উপন্যাস দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসের জন্য পেয়েছেন এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ। কথাসাহিত্যিক পুরস্কার ২০১২। তাঁর গল্প অবলম্বণে নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ঘ্রাণ দেশের বাইরে একাধিক। চলচ্চিত্র উৎসবের পাশাপাশি ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ স্বল্প দৈর্ঘ্য ছবির মর্যাদা পেয়েছে। মাসউদুল হকের গল্প, উপন্যাস এবং নভেলা মিলিয়ে। গ্রন্থ সংখ্যা মােট নয়টি। পেশায় সরকারি চাকুরে।