বঙ্গবন্ধুর জীবনের ক্যানভাস বহু রঙে রঙিন। জীবন ও জগতের সব ছবি সেখানে প্রতিফলিত। এই সুপরিসর মোজাইকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন আছে, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত হয়েছে, পাকিস্তানের শোষণ-শাসন যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে—ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণা আছে এবং সবশেষে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিষাদ, উদারতা ও সংকীর্ণতা, লোভ ও স্বার্থত্যাগ, বন্ধুত্ব ও বৈরিতা, আনুগত্য ও বিশ্বাসঘাতকতা, নৈরাজ্য ও আশাবাদ, এক কথায় মানুষের জীবনের সব দিক তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। একজীবনে এমন বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জনের দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। এই অতুলনীয় অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে দিয়েছে এপিকের বিশালতা। আধুনিক কালের এই এপিকে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সগর্বে উড্ডীন জয়ের পতাকা। বিজয়ের স্থপতি হিসেবে তিনি জীবদ্দশাতেই হয়ে গিয়েছেন কিংবদন্তির নায়ক। মৃত্যুর পর তাঁর জীবন ইতিহাসের ঊর্ধ্বে উঠে রূপান্তরিত হয়েছে রূপকথার কাহিনিতে। সেই অবিস্মরণীয় কাহিনি নিয়ে লেখার শেষ নেই, কখনো হবে না। খ্যাতিমান কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাইয়ের বারোটি গল্পের এই অনবদ্য সংকলনে প্রতিফলিত হয়েছে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবন, তাঁর সময় ও সমকালীন সমাজের নানা ছবি।
Hasnat Abdul Hye জন্ম ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, কলকাতায় । পৈত্রিক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। স্কুল শিক্ষা কলকাতা, যশোর, ফরিদপুর শহরে। কলেজ শিক্ষা ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস এবং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষা লাভের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতা । ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের পর প্রাক্তন পাকিস্তান সরকার এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। হাসনাত আবদুল হাই ছাত্র জীবন থেকে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে ছোটগল্প রচনার মাধ্যমে। ছোটগল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ-কাহিনী, শিল্প ও সাহিত্য সমালোচনা এবং নাটক এই সব শাখায় স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন চার দশকের অধিককাল ।বাংলা এবং ইংরেজিতে একটি কবিতার বই লিখেছেন জাপানে প্ৰবাস জীবনে। প্ৰকাশিত ছোটগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ, উপন্যাস পঁচিশ এবং ভ্ৰমণ-কাহিনী ছয় । সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অলক্ত পুরস্কার, মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলা একাডেমী পুরস্কার এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। তাঁর লেখা উপন্যাস সুলতান ডাবলিন আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।