"অনিকেতন" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার কল্যাণে দুরধিগম্য পৃথিবী মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে সংকুচিত হয়ে আসছে। জীবিকার সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত দেশ থেকে দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। নতুন পরিবেশে তাদের নতুনতর জীবনে সমস্যা ও সম্ভাবনা অনেক। প্রবাসী জীবনে নতুন পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের সতত প্রয়াস স্বদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া মানুষগুলাের জন্য অভাবিতপূর্ব সমস্যা। এর মােকাবিলায় কখনাে এককভাবে, কখনাে সমবেতভাবে তারা দ্বন্দ্বে অবতীর্ণ হয়। ব্যক্তিস্বার্থ, গােষ্ঠীস্বার্থ বা সাম্প্রদায়িকস্বার্থ তাদেরকে নানাভাবে প্ররােচিত ও উদ্বােধিত করে। সমস্যার মােকাবিলায় আহ্বান জানায়। তাদের কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন সচতুর দক্ষতার প্রকাশ দেখা যায় তেমনি নির্বুদ্ধিতার চরমতম অভিব্যক্তিও ফুটে ওঠে কখনাে-বা। আশা-নিরাশা, দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলে আন্দোলিত মানুষগুলাের জীবনচরিতচিত্রণে লেখকের দরদি ও পরিহাসপ্রবণ দৃষ্টিভঙ্গি অনন্যতায় ভরপুর। প্রবাসী জীবনের সমস্যাকে যেভাবে তিনি উপলব্ধি করেছেন ঠিক সেভাবে চিত্রিত হয়েছে পুস্তকটির ছত্রে ছত্রে। প্রগাঢ় জীবনােপলব্ধির সঙ্গে জীবনের জঙ্গমতাকে ধারণ করেই লেখক দুঃখবেদনায় নির্লিপ্ত। মানুষের নির্বুদ্ধিতায় তিনি ক্রুদ্ধ, ক্ষুব্ধ এবং শেষাশেষি পরিহাসপ্রবণ। দীর্ঘদিন বিদেশি ভাষার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যােগযুক্ত থাকায় তার নিজস্ব মাতৃভাষায় একটি নতুন ভঙ্গিমা ফুটে বেরিয়েছে। এটা তার একান্তই নিজের ভাষা, অনুকরণীয় অথচ বাংলা ভাষায় সমীকৃত। পাঠকসাধারণ পুস্তকটি পাঠ করে তৃপ্তিলাভ করবেন, সেইসঙ্গে অভিজ্ঞতার নতুন দিগন্ত উদঘটিত হবে, যা সাহিত্যপাঠের ফললাভের মতােই স্বাদে-গন্ধে-পুষ্টিতে ভরপুর। —অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার
জন্ম : ১লা মার্চ ১৯২৯। মুকিমপুর গ্রাম, হবিগঞ্জ। মৃত্যু : ২৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৬। স্কাউট ভবন, হবিগঞ্জ সদর। হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে বি.এ শেষ বর্ষ সমাপ্তির পূর্বেই আউশকান্দি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে সপরিবারে পাকিস্তানে বসবাস শুরু। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে বিমান বাহিনীর চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সপরিবারে দেশে প্রত্যাবর্তন। ১০ জানুয়ারি ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে পৌঁছানো ও পরে ব্রিটিশ সরকারের এরোপ্লেন গবেষণা কেন্দ্রে স্পেশাল গ্রেডের চাকরিতে যোগদান। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ক্রমাগত পেশা বদল। ম্যানেজার, ইলেকট্রিক, মিস্টি, ফিটার। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগদান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই তিনি তাঁর বিচিত্র জীবনের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখতে শুরু করেন। আবদুর রউফ চৌধুরীর প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত অসংখ্য উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, সাহিত্য ও রচনাসম্ভার বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।