তিতুমীর আবদুল খালেকের হাত টেনে নিলেন নিজ বুকে। ধীরকণ্ঠে বললেন: আবদুল খালেক, এ যুদ্ধে আমরা হেরে যাচ্ছি। কিন্তু কখনোই পরাজয় মেনো না। তোমরা লড়াই চালিয়েই যেয়ো। আবদুল খালেকের চোখ সিক্ত। রুদ্ধ কণ্ঠস্বরে বলল: দোয়া করবেন আমার জন্য। তিতুমীরের ঠোঁটে মৃদু হাসি। কণ্ঠস্বর শান্ত। বললেন: তোমাদের সব মুজাহিদের জন্য আমার দোয়া। আমার জন্যও তোমরা দোয়া করো। এক তিতুমীরের জীবনে জেহাদ শেষ হলো না। কিন্তু বিপ্লবীদের সংগ্রাম জিন্দেগীভর। তা কখনোই থেমে যায় না। আব্দুল খালেক তিতুমীরকে বুকে তুলে নিল। তাঁকে নিয়ে এলো ঘরে। পরম সমাদরে শুইয়ে দিল। লাঠি শক্ত হাতে ধরল আবদুল খালেক। জীবনের সমস্ত শক্তি যেন সে মথিত করছে তার লাঠিতে। লাঠি উঁচিয়ে প্রবল আবেগে ঘর থেকে সে ছুটে বেরিয়ে এলো। আবদুল খালেক ঘোড়ার পিঠে লাফিয়ে চড়ল। পেছনে তাকিয়ে দেখল বাঁশের কেল্লার প্রান্তর। তিতুমীর, বিদায়! সামনে তাকাল। কানে বাজছে: বিপ্লবীদের সংগ্রাম জিন্দেগীভর। তা কখনোই থেমে যায় না। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা অস্তাচলে। মুক্তিসংগ্রামের মন্ত্র গ্রামে-গ্রামান্তরে, নগরে-জনপদে ছড়িয়ে দিয়েছেন ফকির মজনু শাহ এবং ফকির-সন্ন্যাসীরা। তিতুমীরের নেতৃত্বে বাঁশের কেল্লা ঘিরে ব্রিটিশ-বিরোধী রায়ত-কৃষক-জনতার জাগরণ। সেই সময়কার এক ভাড়াটে লেঠেলের পর্যায়ক্রমে মুক্তিসংগ্রামী হয়ে ওঠার বীরত্বগাথা।
Ata Sarkar- কথাসাহিত্যিক আতা সরকার ১৭ই জুন, ১৯৫২ সালে জামালপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। কৈশোরে আইয়ুবী কালাকানুনে তাঁর সম্পাদিত ম্যাগাজিন এবং সত্তরের দশকের শেষে তাঁর গল্প প্রকাশের অভিযোগে লিটল ম্যাগাজিন বাজেয়াপ্ত হয়। রাজনৈতিক সচেতনতা-সমৃদ্ধ তাঁর গল্প। সমাজ-অসঙ্গতি, রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ও সমাজপতিদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে তিনি উচ্চকণ্ঠ। আর একই সাথে তিনি বীজ বোনেন এক নতুন স্বপ্ন-বিশ্বের।