বিবাহ করালে বউকে খাওয়াবে কী বলছিলেন, ‘বিবাহ করালে বউকে খাওয়াবে কী?’ বিয়ে করে বউয়ের খাবার নিয়ে এতো পেরেশানি কীসের! উত্তর একেবারে সোজা। ‘পরিবারে যা রান্না হবে, বউকে তাই খাওয়ানো হবে।’ তাছাড়া সমস্ত মাখলুকাতের রিযিকের মালিক এক আল্লাহ তা’য়ালা। আর এই কথাটি কুরআন-হাদিসের বহু জায়গায় উল্লেখ আছে।
ইসলাম ধর্মে নারী-পুরুষকে বিধি সঙ্গত নিয়মে বিয়ে করার উৎসাহ দিয়েছে। আর যৌন উত্তেজনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে, মহর ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণ প্র্রদানের ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ফরযের পর্যায়ে পৌঁছায় বলে ফতওয়ার কিতাবে উল্লেখ হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় যুবক-যুবতিরা কেবলমাত্র অর্থাভাব বা দরিদ্রতার দরুণ বিবাহের কার্যক্রমে প্রস্ত্তত হয় না। এই ভেবে বসে থাকে যে, বিবাহ করার পর অর্থাভাবে পতিত হবো; কিংবা দরিদ্রতা আমায় আগ্রাসন করে নেবে। ইসলামের দৃষ্টিতে এ মনোভাব মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ মানুষের রুজি-রোজগার কোনো স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয় ব্যাপার নয়। আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তার অনুগ্রহে তাদের ধনী করে দেবেন। বস্তুত আল্লাহ প্রশস্ততাসম্পন্ন সর্বজ্ঞ।’ অর্থাৎ আল্লাহ বললেন, বিয়ে করলেই মানুষ আর্থিক দায়িত্বভারে পর্যুদস্ত হবে, এমন কোনো কথা নাই। বরং উলটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর তা হচ্ছে, অধিক সন্তানে আল্লাহ তা’আলা তার ধন-দৌলত বৃদ্ধি করে দেন। আবু বাকর (রাযি.) বলেছেন, ‘তোমরা বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর আদেশ পালনে তাঁর আনুগত্য করো। তাহলে ধন-সম্পত্তি দানের যে ওয়াদা তিনি করেছেন তা তোমাদের জন্য পূরণ করবেন।’ আলোচ্য হাদিসের ঘটনার উল্লেখ করে ইবনে কাসীর লিখেছেন, আল্লাহ তাআলার অপরিসীম দয়া-অনুগ্রহ সর্বজনবিদিত। তিনি তাঁকে (আনাস বিন মালিককে) এত পরিমাণ রিযিক দান করলেন যে, তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে গেল।
অতএব কোনো মুসলিম যুবকেরই আর্থিক অসচ্ছলতার দরুণ অবিবাহিত জীবন-যাপন করা উচিত নয়। বরং আল্লাহ যে রিযিকদাতা সেই ব্যাপারে আল্লাহর অফুরন্ত দয়া ও দানের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা উচিত; তবে এই কথা জেহেনে রাখতে হবে যে, মহর ও স্ত্রীর শরয়ি ভরণ-পোষণ দেওয়ার যোগ্য আছেন কিনা। কেননা এগুলো স্ত্রীকে দেওয়া ওয়াজিব।
রিযিক সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা কুরআনে এরশাদ করেন, ‘আর পৃথিবীতে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহ তা’য়ালা গ্রহণ করেননি৷ এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল৷ সবকিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে৷’
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর এমন অসংখ্য জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজেদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না৷ আল্লাহই তাদের রিযিক দান করেন এবং তোমাদেরও৷ আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী৷’
ভিন্ন আয়াতে উল্লেখ্য করা হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে রিযক দান করবেন এমন সব উপায়ে, যা সে ধারণা পর্যন্ত করতে পারেনি। আর বস্তুতই যে লোক আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কাজ করবে, সে লোকের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হবেন।’
অন্য একটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি দরিদ্রের ভয় করো; তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ অবশ্যই তাঁর অনুগ্রহে তোমাদের ধনী করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ বড়োই জ্ঞানী ও সু-বিবেচক।’ প্রিয় অভিভাবক! এই অল্প ক’টি কুরআনের আয়াত তুলে ধরার চেষ্টা করলাম৷ ভাবনার দুয়ার আপনার কাছেই, রিযিকের ব্যাপারে আপনি চিন্তা করবেন, না আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাবেন? যদি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা থাকে, তাহলে যাকে বিবাহ করিয়ে আনা হবে, তার জন্য এত ভাবনা কিসের? রিযিকের মালিক নিশ্চয় আল্লাহ! আমাদের শুধু চেষ্টা করতে হবে৷