দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলা কবিতা একুশ শতকে এসে নানা ভাব-ভাবনায় চর্চিত-কর্ষিত হচ্ছে। কখনো ধর্মীয় গীতের সুর-মূর্ছনায়, কখনো ধর্মের সঙ্গে সমাজজীবনের সংযোজনায় এর বিষয়-কাঠামো নির্মিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক চিন্তা, দার্শনিক প্রজ্ঞা, শিল্পকলার প্রণোদনা এবং আধুনিক ইউরোপীয় সাহিত্যের ভাবাদর্শেও পরিপুষ্ট হয়েছে কবিতার ভেতর-বাহির। কাহ্নপা, বড়–চন্দ্রীদাস, চন্দ্রীদাস, জ্ঞানদাস, আলাওল, মুকন্দরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, ঈশ্বরগুপ্ত, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ প্রত্যেকেই যুগের প্রতিনিধি হয়ে প্রতিভার সঙ্গে সাধনার সমন্বয়ে বাংলা কবিতার রূপকাঠামোকে করেছেন সমৃদ্ধ। পয়ার-ত্রিপদীর চালে, স্বরবৃত্ত-মাত্রাবৃত্তের ঢঙে এবং অমিত্রাক্ষরের গভীর ভাবোদ্দীপনার পথ ধরে গদ্যছন্দ ও ফর্মভাঙার যুগ পর্যন্ত বাংলা কাব্যের যে রূপকাঠামো গড়ে উঠেছে, তা কবিদের দীর্ঘ অধ্যবসায় ও নিত্য নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অন্বীক্ষার ফসল। এক কথায় এ গ্রন্থ বাংলা কাব্যের স্বরূপ অন্বেষণ-প্রয়াসে সমৃদ্ধ। গ্রন্থের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে প্রতিশ্রতিশীল গবেষক এম আবদুল আলীমের গভীর অনুসন্ধিৎসার ছাপ, যা পাঠককে বাংলা কাব্যের নান্দনিক ভুবনের স্বরূপ-সন্ধানে সহায়তা করবে।
ড. এম আবদুর ইতিহাস-ঐতিহ্যসন্ধানী গবেষক। সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ তিরিশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো - ভাষা-আন্দোলন-কোষ, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস, ত্রিশোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ, বাংলা কাব্যের স্বরূপ ও সিদ্ধি-অন্বেষা, শহীদ কাদরীর ত্রিভুবন, রবীন্দ্রনাথ উত্তর-আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন, পাবনায় ভাষা-আন্দোলন, সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন, আনিসুজ্জামান, সুচিত্রা সেন, বন্দে আলী মিয়া : কবি ও কাব্যরূপ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন প্রভৃতি। নেশা লেখালেখি হলেও পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। এক সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর। জন্মস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে।