“মুক্তিযুদ্ধে আফসার বাহিনী" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অসীম আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ইতিহাসের পেছনে যে কণ্ঠস্বর আমাদের মাঝে প্রেরণা যুগিয়েছে, একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিজয় অর্জন সুনিশ্চিত করেছিলেন, সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকেও ৭১ এর পরাজিত শক্তি মীর জাফরের প্রেতাত্মারা কেড়ে নিয়েছে ৭৫ এর ১৫ই আগস্টে। আজ প্রতিটি মুহূর্তে আমরা স্মরণ করি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণই ছিল চূড়ান্ত লড়াইয়ের নির্দেশ। ২৫শে মার্চ মধ্য রাতে পাক হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করার পূর্বেই তিনি ইপিআর এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘােষণা দিয়েছিলেন। মহান নেতার স্বাধীনতা ঘােষণার সাথে সাথে সারাদেশে যে কজন বীর সেনানী গর্জে উঠেছিলেন তারই একজন ময়মনসিংহের ভালুকার মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধকালীন বেসামরিক ও ব্যক্তি উদ্যোগে যে কয়টি বাহিনী দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্যে গড়ে উঠেছিল তন্মধ্যে মেজর আফসার বাহিনী অন্যতম। যিনি ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইস্পাত কঠিন শপথে মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের নির্দেশে গঠিত হয় একটি বাহিনী যা পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হন। বীরত্ব গুণে ইতিহাসের তিনটি অনিয়মিত বাহিনীর একটিতে স্থান করে নেন। মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি সংগঠক, মানব হিতৈষী মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ সাহেবের মতাে একজন অসাধারণ মানুষের সকল গুণাগুণ একটি বইয়ে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয় জেনেও সীমিত সামর্থ্যে অসামান্য চেষ্টা মাত্র। উদ্দেশ্য একটাই মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদের মতাে মহৎ মানুষের জীবনাদর্শকে নতুন প্রজন্মকে জানানাে। সে আদর্শকে বুকে ধারণ করে জননেত্রী দেশরত্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সােনার বাংলা বিনির্মাণে অংশীদার করা। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, রাজনীতি, অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও আনুষঙ্গিক বিষয়াবলিসহ যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, নানান কলাকৌশল, গেরিলা যুদ্ধ, সম্মুখ যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে যা আমি করেছি, দেখেছি, শুনেছি, জেনেছি ও বুঝেছি সেসব বিষয়ে খােলামেলা ভাবে নির্মোহ চিত্তে এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি। এ গ্রন্থে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা প্রচলিত মূল্যবােধ, ধ্যান-ধারণা ও জ্ঞাত ইতিহাসকে পাল্টে দিতে পারে। অনেক চরিত্রকে ভিন্ন চরিত্রে রূপান্তরিত করতে পারে। ফলে আমার সাথে অনেকেরই মত বিরােধও সৃষ্টি হতে পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আফসার বাহিনী সম্পর্কে যখন যেখানে কোনাে কিছু খুঁজে পেয়েছি তাই সংগ্রহ করে পাঠকের মাঝে হাজির করার চেষ্টা করেছি। এ গ্রন্থখানি লিখতে হয়েছে হারিয়ে যাওয়া সেই দিনগুলােতে লিপিবদ্ধকৃত আমার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র দিনলিপিকে ভিত্তি করে। প্রায় ভুলে যাওয়া সব কাহিনি ও ঘটনার স্মৃতি মন্থনের মাধ্যমে সকল কিছু তুলে আনতে অনেক অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি থেকে যেতে পারে, যা সংশােধনে অঙ্গীকারাবদ্ধ।