"আরাধ্য সোপান" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা দ্রুত তার মুখে হাতচাপা দিলাে শামছুন্নাহার। তার মুখাবয়বে অবর্ণনীয়, অসহনীয়, সর্বপ্লাবী ক্ষোভ। ক্ষোভ, অনুরাগ ও মায়াময় অনুভূতি। ‘আমার নিস্তরঙ্গ, নিরুত্তাপ, নির্লিপ্ত অন্তরকে রক্তিম, সােনালী ও মােহময় রংয়ে রাঙিয়ে; এক চির আরাধ্যতম, অসীম প্রত্যাশা আর সীমাহীন সুখানুভূতির স্বপ্ন দেখিয়ে; উজ্জ্বল, ঝলমলে, জ্যোর্তিময় এক জীবনের দোড়গােড়ায় নিয়ে এসে এখন তুমি ফিরে না আসার ভয় দেখাচ্ছ? এতই সহজ? বিশ্বস্রষ্টার বিধান এতটা নিষ্ঠুর, নির্মম ও হৃদয়হীন হতে পারে না।' উত্তেজিত শামছুন্নাহারের একটা হাত ধরল তন্ময়। সেই হাতে সুগভীর মমতা, প্রগাঢ় ভালােবাসা, অসীম নির্ভরতা আর জগতের সবটুকু স্পর্শের আনন্দ যেনাে লুকায়িত ছিল। ধীরে ধীরে শামছুন্নাহারের উত্তেজনা স্তিমিত হয়ে এলো, চোখে নেমে এলাে অশ্রু, প্রচণ্ড জলােচ্ছ্বাসে ঝাপসা দু'চোখ নিয়ে শামছুন্নাহার শুধু বলল, 'যাও, তােমাকে আর বাধা দেবাে না, তবে হারিয়ে যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভেবাে না। প্রয়ােজনে পাতালের গহিন তলদেশ থেকে, কিংবা আকাশের সুদূর নক্ষত্রালােক থেকে হলেও তােমাকে আমি খুজে বের করে আনব। এমনকি মহান স্রষ্টার মৃত্যুর ছায়াশীতল মুঠোর ভেতর থেকে হলেও। তুমি যে আমার পালছেঁড়া নৌকার হঠাৎ পাওয়া কাণ্ডারী।’ কান্নাভেজা চোখে শামছুন্নাহার আর কিছু বলতে পারল না। তন্ময়ও। জমাট অশ্রু তার দু’চোখেও। তবে তন্ময়ের মনে হল শামছুন্নাহারের মত রত্ন পেতে হলে অনেক সাধনা, অনেক আরাধনা অনেক উপাসনার প্রয়ােজন হয়। সে তার জীবনে আরাধ্য এক সম্পদ, আরাধ্য এক সােপান।