লেখকের কথা জীবনের শেষ প্রান্তে এসে অনুভব করলাম, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পারিপাশির্^ক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেয়া প্রয়োজন। সেই জন্যই আমার এই গ্রন্থ লেখার প্রয়াস। মাত্র সাড়ে ষোলো বছর বয়সে কোন পরিস্থিতিতে, কিসের তাড়নায় আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি তা এখানে স্পষ্ট করে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার যুদ্ধ শুরু খুলনা জেরার খালিশপুরের জুটমিল থেকে ২৮ মার্চ ১৯৭১, যখন আমি খুলনা দৌলতপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। আর যুদ্ধ শেষ করেছি চট্টগ্রাম জেলার সীতাকু- থানার মাটিতে। যুদ্ধ চলাকালীন আমি ও হোসেন ভাই (পীরজাদা হোসেন আহমদ) হেঁটে প্রতি পদে পদে বিপদ এড়িয়ে খুলনা থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছি এবং চট্টগ্রাম থেকে ফেনী হয়ে আগরতলা ও করিমগঞ্জে পৌঁছি। অতঃপর আমি ভারত সরকারের সহায়তায় বিএলএফেএর সদস্য হিসেবে দেরাদুনে গিয়ে প্রায় দুই মাস প্রশিক্ষণ নিই। তারপর আবার আগরতলা হয়ে উদয়পুর, মনুবাজার ও ছাগলনাইয়া দিয়ে আমরা চট্টগ্রামের ৬০ জন বিএলএফ সদস্য একসঙ্গে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মিরসরাই আসি। এরপর ভাগ হয়ে বিভিন্ন থানায় চলে যাই। সংক্ষিপ্ত আকারে তবে ধারাবাহিকভাবে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসন, বার্ষিকভাবে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত পাকিস্তানিদের অপশাসন এবং ১৯৭১ সালে মোটামুটি প্রতিদিনের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হামলা, মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই এবং সর্বশেষ মিত্র বাহিনীর সাথে পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধের কিছুটা বর্ণনা দিতে চেষ্টা করেছি। চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকু- থানার মুক্তিযুদ্ধের আংশিক বর্ণনা এবং ’৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ইত্যাদিও আছে। এর সাথে আছে আমার স্কুলজীবন, কলেজজীবন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের কিছুটা বর্ণনা। অতীতের ঘটনার ধারাবাহিকতা মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি। সেজন্য কিছু অতীতের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত করে কিছুটা ব্যতিক্রমী ধারায় একটা তথ্যবহুল গ্রন্থ লেখার চেষ্টা করেছি। তথ্য ও ঘটনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় অনেকের উদ্ধৃতি তুলনামূলকভাবে বেশি বড় করতে হয়েছে।