ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের মধ্যদিয়ে দুনিয়াব্যাপী জন্ম নেয় শিল্পপুঁজি, আধুনিক বুর্জোয়া শ্রেণি এবং আধুনিক শিল্পশ্রমিক। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উভয় শ্রেণির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেও পরিবর্তন সূচিত হয় । সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শ্রমিকশ্রেণি নিজের অধিকার। প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করলেও মধ্যস্বত্বভোগী ও কলকারখানায় গড়ে ওঠা নতুন ব্যবস্থাপক-শ্রেণি (New Managerial Class) সর্বোপরি বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী শক্তির নানা অপতৎপরতায় পূর্ব ইউরোপে । যখন সমাজতন্ত্র পতিত হলে তখন উল্লসিত হয়ে উঠল সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্ব পুঁজিবাদ। পুঁজির শোষণ হয়ে উঠল আরও কদর্য ও ভয়াবহ। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয় । শ্রমিক শোষণ আজ নতুন মাত্রা পেয়েছে। শ্রমিক অধিকার পদে পদে ভূলুণ্ঠিত বিদ্যমান। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুঁজির শোষণ আজ গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। শ্রমিক ও শ্রম সেক্টরের বিকাশকেও করছে বাধাগ্রস্ত । এ গ্রন্থে শ্রমিকের অধিকার, দেশে বিদ্যমান শ্রম আইন এবং শ্রমিক শোষণের চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে। বইটিতে লেখক জাহাজভাঙা শিল্পে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা, ডেকোরেটার্স ও কমিউনিটি সেন্টারসমূহে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের করোনাকালে কাজ হারানো, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতের শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যেমন যুক্তি ও তথ্যপূর্ণ মতামত দিয়েছেন, তেমনি বিদ্যমান শ্রম আইন শ্রমবান্ধব না-হওয়া সত্ত্বেও আইনে যেসব সুবিধা দেওয়া আছে, তা কার্যকর করতে শ্রম প্রশাসন ও মালিক পক্ষের অনীহা ইত্যাদি বিষয়ও তার আলোচনা থেকে বাদ যায়নি। লেখকের ভাষা অত্যন্ত সাবলীল ও সহজবোধ্য হওয়ায় কম লেখাপড়া জানা যে কোনো সাধারণ পাঠক এবং শ্রমিকরাও লেখাগুলো পড়ে তাদের অধিকার ও সমস্যা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন ।