সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, যিনি তাঁর মহান গ্রন্থে ঘোষণা করেছেন, ‘‘এটি কিতাব যার আয়াতসমূহ সুস্থিত করা হয়েছে, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্বার পক্ষ থেকে। [সূরা হূদ : ১] ‘‘অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে।’’ [সূরা আল-মায়েদা : ১৫] সালাত ও সালাম প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি, যিনি বলেছেন, ‘সে-ই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম যে আল-কুরআন শিখে ও শেখায়।’ [সহীহ আল-বুখারী]। আরো সালাম বর্ষিত হোক তাঁর পরিবার ও সাহাবীবৃন্দ- সকলের প্রতি। আল-কুরআনুল কারীম আল্লাহর একমাত্র সংরক্ষিত কিতাব যা বাতুলতার সকল স্পর্শ থেকে সদা-পবিত্র। আল-কুরআন তার ভাষার নৈপুণ্যে, শব্দের অলংকরণে ও উপমা-উৎপ্রেক্ষায় অলৌকিক; বক্তব্যে-অভিব্যক্তিতে অনন্য; অর্থের ব্যাপকতায় ও ভাবের প্রকাশভঙ্গিমায় অতুলনীয়। আল-কুরআন আল্লাহর কালাম ও পূর্ণাঙ্গতম রববানী পথ-পদ্ধতি যা মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেয়। এ অলৌকিকতা ও মাহাত্ম্যের কারণেই যখন কেউ এর অর্থ ও ভাব অন্য ভাষায় ভাষান্তর করতে চায় তখন অভিজ্ঞতায় সিক্ত হওয়া সত্ত্বেও এ গুরুভার-কর্ম তাকে নিশ্চিতরূপে ঘাবড়ে দেয়। তবে যেহেতু পবিত্র কুরআন নাযিল হওয়ার মূল উদ্দেশ্যই হল এর সন্নিবিষ্ট বিষয়সমূহ জীবন-সংলগ্ন করে নেয়া, এর হিদায়াত অনুযায়ী পথ চলা, তাই ইহ-পরকালীন কল্যাণপ্রত্যাশী প্রতিটি মানুষের অবশ্য কর্তব্য আল-কুরআনের বক্তব্য অনুধাবন করা। এর আয়াতসমূহ গুরুত্বসহকারে বুঝা। যারা আরবী ভাষাভাষী, যেহেতু আল-কুরআন তাদের ভাষায়ই নাযিল হয়েছে, তাদের জন্য তাই এ কাজটি নিঃসন্দেহে সহজ। তবে যারা অনারব, অনুবাদের আশ্রয় ছাড়া আল-কুরআনের বক্তব্য বুঝা তাদের পক্ষে দুষ্কর। এ হিসেবে অন্যান্য ভাষায় আল-কুরআনের অনুবাদ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এ কাজটি যে মোটেও সহজসাধ্য নয় তা বলাই বাহুল্য। তবু এ গুরুভার কর্মটি সম্পাদনের জন্য এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা কুরআন-প্রেমিকদের অনেকেই। আমাদের বাংলা ভাষার বলয়েও বেশ কিছু অনুবাদ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একক প্রচেষ্টায় উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন আমাদের প্রাজ্ঞ উলামা-মাশায়েখ ও গবেষকদের অনেকেই। তবে সাবলীলতা ও বিশুদ্ধতার বিচারে আরো উত্তম একটি অনুবাদ উপহার দেওয়ার ইচ্ছায় অনুপ্রাণিত হয়ে আল-বায়ান ফাউন্ডেশন নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করে যা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আল-বায়ান ফাউন্ডেশন এ মহৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুবাদ, সম্পাদনা, পরামর্শ, ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে বিশাল এক কর্মী বাহিনী নিয়োগ করে, যারা - আমাদের ধারণা অনুযায়ী- অত্যন্ত দক্ষতা ও ঐকান্তিকতার সাথে অনুবাদকর্মের সকল পর্যায় অতিক্রম করে একটি চমৎকার অনুবাদ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে। এটা নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদেরকে একমাত্র তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করে এ মুবারক প্রকল্পে জড়িত হওয়ার তাওফীক দান করেছেন। কাজের ধরন-প্রকৃতি বিষয়ে বলা যায় যে, শুরুতে বিজ্ঞ অনুবাদকমন্ডলী তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করে সাবলীল ভাষায় অনুবাদকর্ম সম্পন্ন করতে প্রয়াস পেয়েছেন। পরবর্তী পর্যায়ে সম্পাদকমন্ডলীর হাতের ছোঁয়ায় সেগুলোকে আরো সমৃদ্ধ এবং তাতে আরো উৎকর্ষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে সর্বশেষ সম্পাদনা ও নিরীক্ষা পরিষদ অনুবাদকর্মটি আদ্যোপান্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন এবং সম্পাদকমন্ডলীর দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়া কোন অসংগতি কোথাও থেকে গেলে তা সংশোধন করতে প্রয়াস পেয়েছেন। উল্লেখ্য যে, অনুবাদকর্ম যাতে অভিন্ন ধারার অনুবর্তীতায় সম্পন্ন করা সম্ভব হয়, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা ও সম্পদনা পরিষদ শুরুতেই কিছূ নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন, যা এই অনুবাদকর্মের শেষে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। এ অনুবাদকর্মের সাথে আল-কুরআনের যে মূল পাঠ ছাপা হয়েছে তার তিলাওয়াত সহজ করার জন্য- তার পঠন-পদ্ধতি সম্পর্কেও একটি নির্দেশিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। আমরা সর্বার্থে বুঝতে পারি যে, আল-কুরআনের অর্থানুবাদ যত দক্ষ হাতেই করা হোক না কেন, তা আল-কুরাআনের বক্তব্যের শতভাগ প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম। অনুবাদের মাধ্যমে যেটুকু ভাব ও অর্থ প্রকাশিত হয় তা কেবলই আল কুরআনের অর্থ অনুধাবনে অনুবাদকের উপলব্ধির ফসলমাত্র। আর মানুষের জ্ঞান-উপলদ্ধি শতভাগ ত্রুটিমুক্ত হবে- এ ধারণা নিশ্চয় অবান্তর। সে হিসেবে আমাদের এই অনুবাদকর্ম শতভাগ ত্রুটিমুক্ত বলে দাবি করার দুঃসাহসিকতা আমাদের নেই। তাই সুহৃদ পাঠকমন্ডলীর কাছে আমাদের আবেদন এতে কোন ভুল-ত্রুটি পরিলক্ষিত হলে আমাদেরকে অবশ্যই জ্ঞাত করবেন। পরবর্তী সংস্করণে সেগুলো শুদ্ধ করার প্রয়াস অবশ্যই থাকবে ইনশাআল্লাহু তা’আলা। পরিশেষে আল্লাহর কাছে আমাদের দোআ তিনি যেন এ মহান আমল কবুল করেন এবং একে আমাদের সকলের নাজাতের উসিলা বানান। আমীন!