কয়েক যুগের মধ্যে হতে এখন একটা বই প্রকাশিত হয়। সত্যিকার অর্থেই পাঠকের জীবন চিরকালের জন্য বদলে দেয়। এ হচ্ছে সান্টিয়াগো নামের আনুলেশিয়ান অঞ্চলের এক রাখাল যুবকের যাদুকারী কাহিনী। যে শূণ্য হাতে তার ভাগ্য অনুসন্ধ্যানে মিশরের মরুভূমিতে রত্ন ভান্ডার আবিস্কার করতে ভ্রমণ শুরু করে পাওলো কোয়েলহো। পাওলো কোয়েলহো উপন্যাসের কিশোর পাঠকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এক অভিনব ভঙ্গিমায়, তা হল- কিশোর একটি স্বপ্ন দেখেছে। সুদূর মিশরের পিরামিডের কাছে তার জন্য রাখা আছে গুপ্তধন। শুরু হয় স্বপ্নটাকে ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা। পথে কিশোরের সাথে দেখা হয় তাদের কেউ উটচালক, কেউ জ্ঞানপিপাসু ইংরেজ। ইংরেজ ভদ্রলোকের একটা বই পড়ে সে জানতে পারে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ কথা যারা জানত একটি ধাতুকে কীভাবে বছরের পর বছর উত্তাপ দিয়ে গলিয়ে সোনাতে পরিণত করা যায়। ঘটনাক্রমে কিশোরের সাথে সত্যিকারের একজন আলকেমিষ্ট পরিচয় হয় যিনি বহু বিষয় ব্যাখ্যা করে তার ভুল ধারণা কাটিয়ে দিয়েছিলেন। সেই আলকেমিষ্ট তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলার। এক অন্ধকার রাতে তারা দুজনে যখন আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছিল তখন মেষপালক বলেছিল, ‘কষ্ট পাবার ভয়ে আমার মন ভীত হয়ে উঠেছে।’ উত্তরে আলকেমিষ্ট বলেছিল, ‘তোমার মনকে বোঝাও যে কষ্টের চেয়ে কষ্টের ভয় মানুষকে বেশি দুর্বল করে দেয়। তবে হ্যাঁ, স্বপ্নের খোঁজে বেরিয়ে পড়লে কষ্ট একেবারেই হয় না কারণ এক মুহূর্তের জন্য স্বপ্নকে ছুঁতে যাবার অর্থই হল ঈশ্বরকে ছুঁতে যাবার চেষ্টা করা ভাগ্য অনুসন্ধানের অনবদ্য এক যাদুকারী উপন্যাস।
ব্রাজিলিয়ান ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহো ডি’সুজা ১৯৪৭ সালের ২৪ আগস্ট দেশটির রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে জন্মগ্রহণ করেন। একই শহরে তার শিক্ষাজীবনের শুরু এবং বেড়ে ওঠা। আইন বিষয়ে কিছুদিন পড়াশোনার পর ভ্রমণের নেশায় তা আর শেষ করতে পারেননি। ঐ সময়টা ভবঘুরের ন্যায় ঘুরে বেড়িয়েছেন মেক্সিকো, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, চিলিসহ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। এর পরপরই ছোটবেলার স্বপ্ন বই লেখাকে বাস্তবে রূপ দেন। ১৯৮২ সালে ‘হেল আর্কাইভস’ নামক বই দ্বারা সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ করেন। তবে এই প্রবেশ আকর্ষণীয় ছিলো না। এমনকি দ্বিতীয় প্রকাশিত বই ‘প্রাক্টিক্যাল ম্যানুয়েল অব ভ্যাম্পায়ারিজম’ তার নিজেরই অপছন্দের তালিকায় ছিলো। ১৯৮৭ সালে ‘পিলগ্রিমেজ’ এর পর ১৯৮৮ সালে প্রকাশ পায় তার আরেক বই ‘দ্য আলকেমিস্ট’। পাওলো কোয়েলহো এর বই হিসেবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটিই মূলত কোয়েলহোর লেখক-জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তবে ‘৮৭ সালে বইটি প্রকাশিত হয়েছিলো ব্রাজিলের একটি ছোট প্রকাশনা সংস্থা থেকে, যারা ন’শোর বেশি কপি ছাপাতে নারাজ ছিলো। ১৯৯৩ সালে একই বই আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশনী হারপার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। বইটি এখন পর্যন্ত মোট ৮০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে, যা পাওলো কোয়েলহো এর বই সমূহ এর মাঝে অনন্য। কোয়েলহোর কাহিনীগুলোর বিশেষত্ব হলো তার কল্পনাশক্তির জাদুকরী মোহ। কোনো সরল গল্প দ্বারা তিনি গভীর জীবন দর্শনবোধ পাঠকদের মাঝে সঞ্চালন করতে চান, এবং সফলতার সাথে করেও এসেছেন। পাওলো কোয়েলহো এর বই সমগ্র-তে স্থান পাওয়া উপন্যাসগুলোর মাঝে ‘দ্য আলকেমিস্ট’, ‘ব্রিদা’, ‘দ্য ডেভিল এন্ড মিস প্রাইম’, ‘দ্য জহির’, ‘দ্য ভ্যালকাইরিস’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ‘দ্য মাডি রোড’, ‘দ্য রং গিফট’, ‘দ্য জায়ান্ট ট্রি’, ‘দ্য ফিশ হু সেভড মাই লাইফ’, ‘আই উড র্যাদার বি ইন হেল’, ‘রিবিল্ডিং দ্য ওয়ার্ল্ড’ এর মতো ছোটগল্পগুলোতেও দর্শনের প্রমাণ মেলে, যা পাঠকদের গভীরভাবে ভাবতে শেখায়। পাওলো কোয়েলহোর আরেক পরিচয় তিনি গীতিকার। বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্রাজিলীয় গানের জনক তিনি।