‘‘জিজ্ঞাসা ও জবাব (৫ম খণ্ড)"সম্পাদকের কিছু কথা: সম্পাদকের কথা সকল প্রশংসা মহান দয়াময় আল্লাহর নিমিত্ত। সালাত ও সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল, তাঁর হাবীব মুহাম্মাদ,তাঁর পরিজন, সহচর ও কল্যাণ কামনায় প্রলয়দিবস পর্যন্ত তাঁদের একনিষ্ঠ অনুসারীদের উপর। আমাদের রব মহান দয়াময়। তাঁর দয়ার অন্যতম নিদর্শন, দুনিয়ার অন্ধকারে কল্যাণপথে চলবার জন্য তিনি আপন বান্দাকে শিক্ষা দিয়েছেন ওহির জ্ঞান এবং আপন শরীআতে জ্ঞানার্জনকে দিয়েছেন সর্বোচ্চ মর্যাদা। বান্দার কথা ও কর্ম, এমনকি চিন্তাকে পর্যন্ত সঠিকভাবে চালিত করবার জন্য জ্ঞানকে করেছেন সকল বিধানের উপর অগ্রগামী। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে যখন বিশ্বমানবতা ছিল ধ্বংস ও সর্বনাশের একেবারে দ্বারপ্রান্তে, যেখান থেকে আর একপা ফেললেই সে হারিয়ে যাবে চিরপতনের অতল তলে- যদি আমরা চিন্তাশক্তির সবটুকু প্রয়ােগ করে মানুষের দ্বারা সম্ভব এমন সকল পাপ ও অপরাধের তালিকা প্রস্তুত করি এবং ইতিহাসের পাতা উল্টে ফিরে যাই খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর পৃথিবীতে, তবে সেখানে কোনাে একটি জনপদ হয়ত এমন পাওয়া সম্ভব নয়, যেখানে আমাদের প্রস্তুতকৃত অপরাধ ও পাপের তালিকার কোনাে একটি পাপ অনুপস্থিত সেসময়ে মানবতা যেন নিজেদেরকে ধ্বংস ও সর্বনাশের খেলায় ও নেশায় মেতে উঠেছিল- এই ধ্বংস-উনুখ, মুমূর্ষ মানবতাকে মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য এই মঙ্গলময় কল্যাণকামী সর্বজ্ঞ সত্তা আমাদের উম্মি নবী (84) এর নিকট যে আসমানি ব্যবস্থাপত্র পাঠালেন তার সর্বপ্রথম অবতারণ যে মাত্র পাঁচটি আয়াত, সেখান একটি মাত্র আদেশ, দ্বিরুক্ত- ‘পড়ে। এই অবতারণ-দস্তুরই বলে দেয়, মানবতার মুক্তি, সুস্থতা, চিকিৎসা ও সফলতার জন্য সর্বস্রষ্টা রবের নামে' পড়ার গুরুত্ব কতটুকু। পথ-পদ্ধতির ভিন্নতা থাকতে পারে, কিন্তু ইসলামে জ্ঞানার্জনের কোনাে বিকল্প রাখা হয় নি। ইমাম বুখারি রাহ. তাঁর কিতাবুস সহীহ’র একটি পরিচ্ছেদের শিরােনাম দিয়েছেন, 'কথা ও কর্মের পূর্বে জ্ঞানার্জন। মহান আল্লাহ বলেন, “অতএব তােমাদের জানা না থাকলে যারা জানে তাদের সংযােজন করে দিয়েছি। স্যার রাহ. ছিলেন অত্যন্ত শরীফ তবিয়তের মানুষ। ছােটবড়, দূরের, কাছের সবাইকেই আপনি বলে সম্বােধন করতেন এবং হাসি মুখে কথা বলতেন। কিন্তু পাঠক, দেখবেন অনেক জবাবের ক্ষেত্রে স্যার প্রশ্নকর্তাকে তুমি' বলে সম্বােধন করেছেন। তিনি এমনটি করেছেন যখন বুঝতে পেরেছেন, এই প্রশ্নকর্তা তাঁর ছাত্র বা সন্তানতুল্য অত্যন্ত মেহভাজন কেউ। উলামা ও আয়িম্মায়ে কিরামের প্রশ্নোত্তর সঙ্কলনের ধারা অনেক প্রাচীন। অনেকেরই প্রশ্নোত্তর সঙ্কলিত হয়ে উম্মাতের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে এবং ইলমি আকাক্ষার পিপাসা মিটিয়েছে। তার ভেতর শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রাহর ‘মাজমুউল ফাতাওয়া সমাদর, গ্রহণযােগ্যতা ও উপকারিতায় অনন্য। ড. খােন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ, যে দরদ ও কল্যাণেচ্ছা নিয়ে দাওয়াতের ময়দানে ছুটে বেড়িয়েছেন এবং উম্মাতের বিন্নি জিজ্ঞাসার জবাব দিয়েছেন, আমাদের আশা, মহান আল্লাহ তাঁর এ প্রশ্নোত্তর সঙ্কলনকেও সমাদৃত, উপকারী ও দীর্ঘস্থায়ী করবেন। ‘জিজ্ঞাসা ও জবাব সিরিজির এখটির শ্রুতিলিখন করেছে স্নেহাস্পদ আল মাসুদ আব্দুল্লাহ ও সাফায়াত শাহরিয়ার সাক্ষর। মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন দয়া করে এ সঙ্কলনটির ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে কবুল করে নেন। একে অনুলেখক, সম্পাদক, ব্যবস্থাপক, প্রকাশক, শুভাকাঙ্গী ও পাঠক- সকলের নাজাতের ওয়াসীলা বানিয়ে দেন। একাজের মূল ব্যক্তিত্ব ড. খােন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহর সকল উত্তম কর্মকে কবুল করেন, তাকে উম্মতের জন্য কল্যাণকর করেন, তাঁর সকল ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করে আপন রহমতের কোলে আশ্রয় দেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের সর্বোচ্চদের কাতারে শামিল করে নেন এবং আমাদেরকে জান্নাতে তাঁর সাথে একত্রিত করেন। আমীন! সালাত ও সালাম আল্লাহর খলীল ও হাবীব মুহাম্মাদ,তাঁর পরিজন ও সহচরগণের উপর।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় ইসলাম ধর্ম বিষয়ক ব্যক্তিত্ব, লেখক এবং গবেষক। তাঁর জন্ম ১৯৬১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার ধোপাঘাট গোবিন্দপুর গ্রামে। তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করে আলিম, ফাজিল এবং আল হাদিস বিভাগ থেকে কামিল পাস করেন। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি সৌদি আরবের রিয়াদস্থ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরপর দুবার সেরা ছাত্রের পুরষ্কার লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকার দারুস সালাম মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল হাদিস, এবং পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পিস টিভি, ইসলামিক টিভি, এটিএন বাংলাসহ বিভিন্ন চ্যানেলে ধর্মবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতেন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর। সর্বদা মানুষকে ইসলামমুখী করার ব্যাপারেই তিনি সচেষ্ট ছিলেন। ২০১৬ সালের ১১ মে মাগুরায় এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন দেশবরেণ্য এই ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বইগুলো সবই ইসলাম ধর্ম বিষয়ক। তিনি ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ত্রিশের অধিক বই রচনা করেছেন। এর মধ্যে কিছু অনুবাদ, কিছু ব্যখ্যা ও গবেষণামূলক। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমূহ এর মাঝে এহইয়াউস সুনান, কুর’আন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, রাহে বেলায়াত, ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ, খুতবাতুল ইসলাম, A Woman From Desert, Guidance For Fasting Muslims, A Summary of Three Fundamentals of Islam প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি আরবী ভাষাতেও বই রচনা করেছেন। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর বই সমগ্র মানুষকে ইসলামমুখী করতে, ইসলামের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার সুযোগ করে দিয়েছে। তবে তিনি কেবল বইয়ের গণ্ডির মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। এর পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, ধর্মপ্রচার এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথেও নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রাখতেন তিনি।