মনু মাঝির পেশা মাঝিগিরি। একমাত্র সম্বল ছৈওয়ালা একটি কাঠের নৌকা। যাত্রী নিয়ে নৌকা বেয়ে সে রোজ দেড়-দুইশ টাকা আয় করে। তা দিয়ে তার সংসারের পাঁচ সদস্যের ভরণ- পোষণ করে। সদস্যরা হলো- সে নিজে, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও বৃদ্ধ মা। সে পেশায় মাঝি হলে কী হবে, তার চরিত্র সুশোভিত ফুলের চেয়েও পবিত্র। তার বিশেষ নজর মায়ের দিকে- কোথাও যেতে- আসতে তার মাকে বলে যাওয়া এবং মায়ের সার্বিক অভাব পূরণ করা। সে কাউকে কথা দিলে তা যে কোনো উপায়ে তা রক্ষা করে যদিও তা তার সাধ্যের প্রতিকূলে হয়। যাত্রীদের ভুলে ফেলে যাওয়া পঁচিশ হাজার টাকা যাত্রীদের খুঁজে না পেয়ে থানায় পুলিশের জিম্মায় জমা দিয়ে আসে। এক ব্যবসায়ীর ফেলে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্র ও নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়ে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেয়। নদীতে ঢেউয়ের কবলে পড়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে ডুবে যায়। অথচ মাঝি নিজের নৌকার মায়া ত্যাগ করে পাঁচ-ছয় বছরের একটি ছেলের জীবন বাঁচায়। চাচার সাথে নৌকা বাইচ খেলা দেখতে এসে পাঁচ বছরের একটি ছেলে হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া ছেলেটিকে মনু মাঝি নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয় এবং ছেলেটির এলাকায় মাইকিং করে তাকে তার পিতা ও চাচার কাছে ফিরিয়ে দেয়। এক এলাকার ভাঙ্গা রাস্তায় ছাত্র ও গরিব অসহায় লোকদের ফ্রি আর সাধারণ লোকদের মাত্র দুই টাকায় পারাপার করে এমন নজির নিজ চোখে দেখে এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মুগ্ধ হয়ে যান। অথচ অফন্যান্য মাঝিরা এত কম রেটে লোক পারাপার না করে অন্যত্র চলে যান। মনু মাঝি সর্বদা সত্য কথা বলে, মানুষের উপকার করে এবং যে কোনো মহৎ কাজে সকলের আগে এগিয়ে যায়। মনু মাঝি সৎ স্বভাব, সচ্চরিত্র ও সুমহান কাজ দেখে সকলেই অভিভূত হয়ে যায়। এমনকি এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান গরিব ও অসহায় মনু মাঝির প্রতি খুশি হয়ে তার নাম রাখেন ‘পরম হিতৈষী মনু’।