হে যুবক ফিরে এসো রবের দিকে দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ মুসলিম উম্মাহর তরুণ প্রজন্ম অতিক্রম করছ ধ্বংস ও পতনের এক নিদারুণ ক্রান্তিকাল। নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমা পেরিয়ে অপেক্ষা করছে কলঙ্কতিলক পরাজয়ের। নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনার অতল গহ্বরে তারা নিমজ্জিত। অনৈক্য ও আত্মঘাতির বেড়াজালে আবদ্ধ। চিন্তা-চেতনা, মন-মননে দাসত্বের কারাগারে বন্দী। দুনিয়ায় মোহ-লালসা এবং বস্তুবাদের রঙিন নেশায় তারা এতোটাই মত্ত যে, তারা বেমালুম ভুলে গেছে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা। ভুলে গেছে উম্মাহর প্রতি অপরিসীম করণীয় ও দায়বোধের কথা। ভুলে গেছে নিজেদের গৌরবান্বিত অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। ভুলে গেছে একদা উম্মাহর বিজয় রচিত হয়েছিল মুসলিম যুবকদের হাতে। যুব প্রজন্ম উম্মাহর প্রধান শক্তি ও হাতিয়ার। আজ পৃথিবীর দিকে দিকে নিপীড়িত হচ্ছে মুসলমান। নারী ও শিশুদের আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে নীলাকাশ। ইথারে কান পাতলে শোনা যায় নির্যাতিতের করুন আহাজারি। প্রতিটি জনপদ যেন ভয়াল মৃত্যুপুরী। আজ যদি মুসলিম তরুণ প্রজন্ম নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রতি সচেতন হতো, গৌরবান্বিত ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রতি সজাগ হতো যদি, তাহলে উম্মাহকে অতিক্রম করতে হতো না এই দুঃসময়। যারা একদা নেতৃত্ব দিতো, যাদের হুংকারে কেঁপে কেঁপে উঠতো দুনিয়ার মহাশক্তিধর রাজা-বাদশাহ, যাদের পদভারে নড়ে উঠেছে একদা পৃথিবীর দশ দিগন্ত, আজ তারাই হচ্ছে নিগৃহীত, নিপীড়িত। তারাই আজ হয়ে আছে অন্যের সেবাদাস। এ মর্মন্তুদ ও করুণ পরিস্থিতি থেকে মুসলিম উম্মাহকে মুক্তি পেতে হবে। ফের ঘুরে দাঁড়াতে হবে লজ্জা ও কলঙ্কের কালিমা মুছে। মাথা উঁচু করে পুনরায় দিতে নারায়ে তাকবীরের ধ্বনি। আর এর জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতি গ্রহণ। উপযুক্ত করণীয় নির্ধারণ। তন্মধ্যে অন্যতম করণীয় হলো, মুসলিম যুব প্রজন্মকে জাগ্রত হতে হবে। পার্থিব নেশা, বস্তুবাদের লোভাতুর হাতছানি, পুঁজিবাদের অন্ধত্ব, সর্বোপরি অবাধে ও নাফরমানির জাল ছিন্ন করে ফিরে আসতে হবে ইসলামের শাশ্বত জীবনধারায়। জীবনেও বাস্তবায়িত করতে হবে প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। বক্ষ্যমাণ গ্রন্থটি মুসলিম যুব ও তরুণ প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেবে তার কর্তব্যের কথা। উম্মাহর প্রতি তার অপরিসীম দায়বোধের কথা। স্মরণ করিয়ে দেবে হারানো ইতিহাস ঐতিহ্যের কথা। এ গ্রন্থ মুসলিম তারুণ্যকে করে তুলবে অধিকতর সচেতন । তার হৃদয়ে ঈমানের সুবজ বৃক্ষ রোপণ করবে। তার চরিত্রকে করবে সুশোভিত। তার চেতনাকে করবে শানিত। চিন্তাকে করবে চৈত্রের রোদের মতো স্বচ্ছ ও প্রখর।
শাইখ খালিদ আর-রাশিদ—দাঈ। সৌদি আরবের পূর্ব-প্রদেশের শহর আল-খোবারে ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মহল্লার মসজিদে হিফজুল কুরআনের হালকায় বসতেন। শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল আকর্ষণ। তবে স্বপ্ন ছিল তিনি সামরিক অফিসার হবেন। ক্রিমিনোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার জন্য তিনি আমেরিকা চলে যান। পড়াশোনা শেষে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন এবং ফুটবল খেলতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। ১৪১২ হিজরির রমাজান মায়ের কথায় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি দীনি ইলম অর্জনে মনোনিবেশ করেন। এবং আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে গিয়ে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০৫ সালে ডেনমার্কের একটি পত্রিকা প্রিয় নবি সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করলে তিনি প্রতিবাদী হন এবং গ্রেপ্তারি বরণ করেন।