সে এক আশ্চর্য সময় এসেছিল আমাদের জীবনে, কালের দিক থেকে ১৯৭০-এ পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, স্বাভাবিক নিয়মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার কথা, কিন্তু ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী তা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। একের পর এক তালবাহানা ও ষড়যন্ত্র করে হানাদার বাহিনীর প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছাত্রদের হল, পুলিশ ও বিডিআর ব্যারাকের ওপর। নৃশংসভাবে হত্যা করে অগণিত মানুষকে, সম্ভ্রমহানি করে কয়েক লাখ মা-বোনের, পুড়িয়ে দেয় সাধারণ মানুষের বাড়িঘর-দোকানপাট-স্থাপনা। ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক যারা কখনো অস্ত্র হাত দিয়ে ছোঁয়নি, তারাও দেশমাতৃকার এই দুঃসময়ে নিজেদের উৎসর্গ করে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে। প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পাশে পায় দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সহায়ক ভারতীয় বাহিনীকে। অসম যুদ্ধ সত্ত্বেও পাকিস্তানি বাহিনীকে বিরানব্বই হাজার সৈন্যসহ ১৯৭১ সালের ষোলোই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে হয়, আমরা পাই স্বাধীন বাংলাদেশ । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত সুলিখিত দুটি কিশোর উপন্যাস ও গল্পসংকলন এই সমগ্র । বছরের সেরা কিশোর উপন্যাস হিসেবে অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘মায়ের কাছে ফেরা’ বিশেষভাবে অভিনন্দনযোগ্য কারণ একই সঙ্গে এটা মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ইতিহাস উপন্যাস পাঠকে ব্যাহত করে না আবার উপন্যাস ক্ষতিগ্রন্থ করে না ইতিহাসকে । এই সমগ্রর ভাষা ঝরঝরে, কাহিনি সংহত, চরিত্র চিত্রণ দক্ষ । একটা বিশেষ সময় ও পরিপার্শ্বের আবেদনময় অথচ বিশ্বস্ত ও বাস্তবভিত্তিক উপস্থাপন উপন্যাস ও গল্পগুলোকে উল্লেখযোগ্য করেছে।