বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে অন্যতম পথিকৃত। তাঁর রয়েছে বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস- যা জয় করে নিয়েছে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের। ‘পথের পাঁচালী’ দিয়েই তিনি লাভ করেছেন জনপ্রিয়তা। উপন্যাসই শুধু নয়, রচনা করেছেন ভ্রমণকাহিনি, দিনলিপি ও সোয়া দুশোর ওপর ছোটোগল্প। গল্পের বর্ণনা উন্মোচনে দেখার দৃষ্টিকোণেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজের বর্গীয় অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করেছেন সাহিত্য নির্মাণে। গল্পের রূপবন্ধনে তিনি পৌঁছে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। গল্পের বয়ানে পল্লিগ্রামের প্রকৃতিকে নিয়েছেন মন খুলে- যা তাঁর কাজকে দিয়েছে বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা। আর তাই তাঁর সৃষ্টিতে সত্তার মূল বিরাজমান। সুখে-দুঃখে, স্নেহ-মমতায়, মিলনে-বিচ্ছেদে তাঁর ছোটোগল্পগুলোও জীবনাকাশে এক গভীর বন্ধনের অফুরন্ত ভাণ্ডার। জীবনের নানা বাঁক তুলে এনেছেন অসীমের অভিযাত্রী হয়ে। কিশোর-কিশোরিদের জন্য রয়েছে তাঁর প্রচুর ছোটোগল্প। এসব ছোটোগল্প কিশোর-কিশোরীদের মনে জায়গা করে নিয়েছে প্রকৃতির মতোই- যেখানে বেঁচে থাকে প্রাত্যহিক জীবন স্মরণে-মননে। আজকের এই অন্যরকম যান্ত্রিক দুনিয়ায়ও তাঁর ছোটোগল্পের আবেদন কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ দেবে, প্রেরণা দেবে বলাই যায় নিশ্চিত করে।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছু কালজয়ী উপন্যাস রচনার মাধ্যমে জয় করে নিয়েছেন বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের হৃদয়। শুধু উপন্যাসই নয়, এর পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, দিনলিপি ইত্যাদি। প্রখ্যাত এই সাহিত্যিক ১৮৯৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন, তবে তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল যশোর জেলায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাঁর প্রথম বিভাগে এনট্রান্স ও আইএ পাশ করার মাধ্যমে। এমনকি তিনি কলকাতার রিপন কলেজ থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএ পাশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপশি তিনি শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমূহ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো 'পথের পাঁচালী', যা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ার মাধ্যমে। এই উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় অর্জন করেছেন অশেষ সম্মাননা। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই এর মধ্যে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো 'আরণ্যক', 'অপরাজিত', 'ইছামতি', 'আদর্শ হিন্দু হোটেল', 'দেবযান' ইত্যাদি উপন্যাস, এবং 'মৌরীফুল', 'কিন্নর দল', 'মেঘমল্লার' ইত্যাদি গল্পসংকলন। ১০ খণ্ডে সমাপ্ত ‘বিভূতি রচনাবলী’ হলো বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর বই সমগ্র, যেখানে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার পৃষ্ঠায় স্থান পেয়েছে তার যাবতীয় রচনাবলী। খ্যাতিমান এই সাহিত্যিক ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর 'রবীন্দ্র পুরস্কারে' ভূষিত হন।