সমাজ-সংস্কৃতি-সাহিত্য ও বিজ্ঞান-ইতিহাস-দর্শনের চিন্তকদের রবীন্দ্রনাথ বলতেন ‘ভাবুক সম্প্রদায়। ‘ভাবুকতা’ শব্দটি আমরা বুঝি কাব্যিকতা বা কল্পনাপ্রিয়তা। যদিও এর মধ্যেও চিন্তার নির্যাস থাকে। রবীন্দ্রনাথ শুধু সৃষ্টিশীল লেখকই নন, তিনি একজন সমাজ-রাজনীতি-সংস্কৃতি-দর্শনেরও মননবুদ্ধ সাধক। বিশেষ করে তার দেশভ্রমণমূলক বইগুলিও—এমনকি চিঠিপত্রও প্রজ্ঞাশীল নান্দনিকতার প্রকাশক। বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণকারী হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা ও রসজ্ঞ । দৃষ্টিলােকের প্রমাণও কম নয়। দুই গােলার্ধ পূর্ব ও পশ্চিম, উভয় স্থানে তিনি নানা লক্ষ্যে-উপলক্ষ্যে ভ্রমণ করেন, দেশ-মানুষ-সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসেন। সেক্ষেত্রে এশিয়া মহাদেশ বিশেষ করে ভারতসংলগ্ন। দেশগুলি সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা চর্চিত হয়েছে একটি স্বকীয় প্রজ্ঞা ও স্বরূপদর্শনের আলােকস্নাত হয়ে। রবীন্দ্রনাথের এশিয়া দর্শন বইটিতে তার এশিয়া মহাদেশের কয়েকটি দেশ-জাতির সঙ্গে পরিচয় ও বন্ধুতার নিবিড় প্রকাশ ঘটেছে। তৎকালীন সময়পরিসরে রবীন্দ্রনাথের প্রেক্ষণ, চিন্তারাশি ও অনুভূতিরও উন্মােচন ঘটেছে। পূর্ব গােলার্ধ তথা এশিয়াই ভবিষ্যতের আলােকবর্তিকা হয়ে উঠবে এই বিশ্বাস তার ছিল। এই বইটি সেসবেরই দার্শনিক-নান্দনিক ও রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক এমনকি প্রাকৃতিক রূপের রাবীন্দ্রিক ডিসকোর্স। এতে ছিন্নপত্র, ভারতবর্ষ, জাপান-যাত্রী, জাভাযাত্রীর পত্র, পারস্যে এবং চীন বিষয়ে একটি গ্রন্থ ও চীন ভ্রমণের লব্ধ অভিজ্ঞান ব্যাখ্যাত হয়েছে। গ্রন্থরচয়িতার দৃষ্টিকোণ অন্তর্বয়নরীতি ও মননশীল প্রজ্ঞার সঙ্গে সম্মিলিত হয়েছে তাঁর। বিচার-বিচেনার স্বকীয়তা এবং রবীন্দ্রচিন্তাদর্শের গভীরে প্রবেশের সদিচ্ছা।
গবেষক ও প্রবন্ধকার বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। পিতা মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, মা মজিদা বেগম। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।