কাল্পনিক অস্তিত্ব নিয়ে তাঁকে অবিরাম খেলে যেতে হয়। এবং এই অস্তিত্বগুলো তাঁর কলম-কৌশলে বিচিত্র সব চরিত্রাকারে এগিয়ে যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের দিকে। যাবার পথটাও অভিজ্ঞতাপ্রসূত কাল্পনিক। জগৎসংসারের নানা অলিগলিতে কখনও সরল কখনও আঁকাবাঁকা পথ ধরে চলে এসব চরিত্র। দক্ষ নাট্যকারের কাছেও সবসময় কাজটা মসৃণ হয় না। কাল্পনিক অস্তিত্বগুলো পৃথক প্রবল সত্তা নিয়ে সহসাই নাট্যকারকে গ্রাস করতে চায়। কখনও খেই হারিয়ে ফেলতে হয় নাট্যকারকে। চরিত্র সত্তা আর লেখক সত্তার এ এক সূ² মনোস্তাত্তি¡ক লড়াই। এই লড়াইয়ে নিয়ন্ত্রণ হারালে ছিটকে পড়বেন নাট্যকার, ছন্দপতন হবে দৃশ্যকাব্যের। নাট্যকারকে এজন্য সুতোর ওপর হাঁটার কৌশল রপ্ত করতে হয়। নবীন নাট্যকার মাহবুব আলমকে কিন্তু আমরা সুতোর ওপর দিয়ে স্বচ্ছন্দেই হাঁটতে দেখি। সংখ্যা দিয়ে মান বিচার নয়, তিনি যেকটা সৃজন পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেন তা থেকেই আমরা তাঁকে চিনি নিতে পারি-তিনি আমাদের কাছে হয়ে ওঠেন বিশেষ। মাহবুব আলম সহজেই আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির গভীরে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে কুড়িয়ে আনা মিথকে আমাদের নানান আঙ্গিকের ছকে ফেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন প্রতিনিয়ত। তাঁর ‘রূপসুন্দরী' বা ‘তিনকড়ি' এই ধারারই সৃজন। আবার তিনি সমসাময়িক আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকেও নিজেকে সরিয়ে রাখেন না। আমরা দেখতে পাই প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর পার¯পরিক স্বার্থকেন্দ্রিক দ্ব›দ্বসংঘাতের অভিঘাতগুলো সহজেই উঠে আসে তাঁর ‘অবজেকশন ওভাররুলড'এর মতো নাটকে। আপন ঐতিহ্য মাথায় রেখে বিশ্বরূপকে দেখতে পারার বিরল এক গুণ প্রতিভাবান নাট্যকার মাহবুব আলমের মধ্যে রয়েছে। আর তা রয়েছে বলেই তিনি অনায়াসে ব্যষ্টি থেকে সমষ্টিতে যেতে পারেন। এবং শেষ বিচারে তাঁর সৃষ্টি ‘আমি' থেকে ‘আমরা' হয়ে ওঠে। মলয় ভৌমিক নাট্যকার, নির্দেশক