বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে কবিতাগুলো পড়েছি। একজন নবীশ কবির উত্থানের সংকেত পেয়ে শিহরিত হয়েছি আর বারবার উচ্চারণ করেছি ‘কবিতা তো অনেক রকম’। রকমফের যতই হোক, আগে তো কবিতা হতে হবে! সেই কবিতা হওয়ার মাপকাঠি কী? সুধীন্দ্রনাথ দত্ত বলেছিলেন ‘ছন্দোস্বাচ্ছন্দ্যে’র কথা। কিন্তু আমরা দেখেছি ছন্দছুট চরণও কবিতা হয়ে উঠেছে। জীবনানন্দ দাশ বলেছিলেন ‘উপমা’র গুরুত্বের কথা। আমরা উপমাহীন কবিতাও পড়েছি। তাই কোনো তরুণের কবিতা পড়তে গিয়ে আমরা কোনো মতবাদের দ্বারস্থ হতে চাই না। কেবল কবিতার শব্দ ও বাক্যাংশ পাঠ করেই কবিতার রস গ্রহণ করতে চাই। ইমরান সালেহ্ শাওনের কবিতার পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আমার মনে কেবলই আশাবাদের জন্ম হয়। কবি যখন বলেন, ‘সবই গেঁথে আছে-- সেই পিছলে পড়া ভুল চেনা পথ, ভুল ছন্দে কবিতার মতো করে অক্ষর সাজানো আর কবিতা। শুধু তুমিই গাঁথনি-- আমার হৃদয়ে।’ তখন আমরা কবিতাকে নতুন রূপে পাই। গতানুগতিক, আটপৌরে, নিত্য ব্যবহার্য শব্দমালাকে তিনি কবিতায় স্থান দিয়েছেন। মুখের ভাষা, স্বাভাবিক উচ্চারণকে তিনি কবিতায় রূপ দিয়েছেন। শীলনের ছাপ স্পষ্ট হওয়া সত্বেও সম্ভবনার পাল্লাকেও ভারী মনে হয়। কবিতার চরণকে আঁটসাঁট করে বাঁধা এই কবির জন্য সময়ের ব্যাপার মাত্র। যতটা পথ পেরোলে কবি হওয়া যায়, তার সবটুকু প্রস্তুতিই কবি সম্পন্ন করেছেন। ‘বুকের বাঁ পাশে’ কবিতার পাণ্ডুলিপি পাঠ করে আধুনিক বাংলা কবিতার বিশাল বিস্তৃত ভুবনে কবিকে স্বাগত জানাই। তপন বাগচী উপপরিচালক (গবেষণা), বাংলা একাডেমি, ঢাকা ১০০০