"খাঁচায় অন্ধ কথামালা" বইটির শেষের ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনের মহত্তম ঘটনা, চরম বেদনা ও পরম বীরত্বে মণ্ডিত যে অভিজ্ঞতা শহরে ও গ্রামে অযুত মানুষের জীবনে তােলপাড় জাগিয়েছিল কতােই না ভিন্নভাবে। কথাসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের বহুব্যাপ্ত বাস্তবতার প্রতিফলন কোনাে সহজসাধ্য কাজ নয়, এক্ষেত্রে সার্থকতার উদাহরণও তাই বিশেষ বিরল। তেমনি বিরল কতক শৈল্পিক সাফল্যের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে রশীদ, হায়দারের উপন্যাস খাঁচায় এবং অন্ধ কথামালা। নগরীর জীবনে আটকে-পড়া মধ্যবিত্ত বলয়ে মুক্তিযুদ্ধের অভিঘাত অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে খাচায় উপন্যাসে। অন্ধ কথামালা দূরবর্তী গ্রামে বাংলার আবহমান জীবনধারায় দারিদ্র-শােষণবঞ্চনা-পীড়িত পরিবেষ্টনে জীবনের রসপিপাসু মানুষজনের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আলােড়ন প্রতিফলিত করেছে। গ্রামের তরুণ একান্ত সহজভাবেই রূপান্তরিত হয় যােদ্ধায়, কিন্তু অন্ধকারের শক্তির বর্বর হাত এই তরতাজা নবীন প্রাণের কণ্ঠরােধ করতে প্রসারিত হয়। জীবন ও নিসর্গের পরতে পরতে মিশে থাকা জীবন-তাগিদ এবং অন্ধতার শক্তির বিরােধ এই কাহিনীতে বিশাল পটভূমিকা নিয়ে উন্মােচিত হয়। বস্তুত রশীদ হায়দার, নিপুণ কথক, কাহিনীর আপাত সারল্যের পটভূমিকায় ব্যাপকতর জীবনবােধ মেলে ধরতে পারেন। দুই ভিন্নধর্মী উপন্যাসের কাঠামােয় মুক্তিযুদ্ধের গভীরতর বাস্তবতার অনুপম রূপায়ণ তিনি ঘটিয়েছেন। স্মরণীয় দুই উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধের যুগলবন্দি, এখন একত্রে প্রকাশিত হয়ে পাঠকদের জন্য বয়ে আনবে আলাদা আমেজ, আলাদা উপলব্ধি।