‘স্টাইল ইজ দ্য ম্যান’ বলে ইংরেজিতে একটি কথা আছে, যা জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের বেলায় বিশেষভাবে প্রযোজ্য। কারণ, বলা, চলা এবং লেখায় তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটা নিজস্ব স্টাইল । দক্ষ ভাস্কর যা গড়েন তাই যেমন নান্দনিক এবং চিত্তাকর্ষক হয়ে ওঠে তেমনি। প্রজ্ঞাবান আনিসুজ্জামান যা বলেছেন, তা-ই অনিন্দ্যসুন্দর। হয়ে উঠেছে । শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং দেশ-কালের। গুরুগম্ভীর বিষয়ের পাশাপাশি অতি সাধারণ বিষয়ও তার বক্তৃতাশৈলীতে অসাধারণ হয়ে উঠেছে। তাঁর বক্তৃতা যেমন সংক্ষিপ্ত তেমনি পরিমিত ও সারবস্তুসম্পন্ন । তথ্যের ভার কিংবা বাগবিস্তার কোনোটি দ্বারাই তা আচ্ছন্ন নয় । ভারিক্কি চালের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান হোক আর বৈঠকি মেজাজের ঘরোয়া আড়াই হোক, সব জায়গায়ই তিনি বক্তৃতা দিতেন সংযত বাকে এবং স্বতঃস্ফুর্ত ভঙ্গিতে । সময় সময় হালকা রসিকতা এবং আলংকরিক চারুত্বের প্রকাশ ঘটালেও তাতে পুনরাবৃত্তি বা অতিকথন থাকত না । বিচিত্র বিষয়ে প্রদত্ত বাতি আনিসুজ্জামানের অগণিত বক্তৃতার মধ্য থেকে শ-তিনেক বক্তৃতার চুম্বকাংশ সংগ্রহ করে পাঠকের সামনে হাজির করেছেন ঋদ্ধিমান গবেষক ড. এম আবদুল আলীম। বইটি অনুসন্ধানী গবেষক এবং বিদগ্ধ পাঠকের যে বিশেষ উপকারে আসবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ড. এম আবদুর ইতিহাস-ঐতিহ্যসন্ধানী গবেষক। সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিষয়ে এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ তিরিশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো - ভাষা-আন্দোলন-কোষ, রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন : জেলাভিত্তিক ইতিহাস, ত্রিশোত্তর বাংলা কাব্যে বিচ্ছিন্নতার রূপায়ণ, বাংলা কাব্যের স্বরূপ ও সিদ্ধি-অন্বেষা, শহীদ কাদরীর ত্রিভুবন, রবীন্দ্রনাথ উত্তর-আধুনিকতা ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন, পাবনায় ভাষা-আন্দোলন, সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন, আনিসুজ্জামান, সুচিত্রা সেন, বন্দে আলী মিয়া : কবি ও কাব্যরূপ, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা, আওয়ামী লীগ ও ভাষা আন্দোলন প্রভৃতি। নেশা লেখালেখি হলেও পেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা। এক সময় ঢাকা কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও কলা অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার লাভ করেছেন। তাঁর জন্ম ১৯৭৬ সালের ১ ডিসেম্বর। জন্মস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রামে।