আল-কুরআন মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য প্রেরিত আল্লাহ্ কালাম। সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর উপর অবতীর্ণ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব এবং কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য একমাত্র জীবনবিধান। পথভ্রান্ত এবং সত্য-বিচ্যুত মানুষকে সত্য পথে, সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহর এক অশেষ নিয়ামত আল-কুরআন। সেইজন্য সকলেরই পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও তার অর্থ অনুধাবন করা আবশ্যক। এ ছাড়া দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনে মানব জাতির কল্যাণ লাভের আর কোন বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনের মর্ম ও শিক্ষা যথাযথভাবে অনুধাবন এবং তদনুযায়ী জীবন গঠন করতে হলে সকলকেই নিজ নিজ মাতৃভাষায় আল-কুরআন বুঝতে হবে। সেই লক্ষ্যেই বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের একটি সার্থক ও নির্ভরযোগ্য অনুবাদ গ্রন্থ এটি। প্রতিটি ভাষারই নিজস্ব বাকভঙ্গি ও বাক্য গঠন-প্রণালী আছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই অনুবাদগ্রন্থে মূলকে অক্ষুণ্ন রেখে বাংলা ভাষার প্রকৃতিকে সাধ্যমত রক্ষা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য কোন বন্ধনীর ব্যবহার না করে ভাষার গতি তথা প্রবহমানতাকে অব্যাহত রাখা হয়েছে। শাব্দিক তরজমায় কুরআনুল করীমে ব্যবহৃত বিশেষ আরবি বাগধারা, অলংকার ও প্রবচনগুলোর অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট না হওয়ায় অত্র অনুবাদ গ্রন্থে যথাসম্ভব এই সব বাগধারা, অলংকার ও প্রবচনের সমার্থবোধক বাংলা বাগধারা ও অলংকার ব্যবহৃত হয়েছে। পরিশেষে বলতে হয়, প্রামাণ্য, নির্ভরযোগ্য ও উন্নতমানের বাংলা তরজমা হিসাবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত এই আল-কুরআনুল করীম দেশের সকল মহলের নিকট সমাদৃত, প্রশংসিত ও গৃহীত হয়ে আসছে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ভিত তৈরি হয়েছিলো ১৯৫৯ সালে। পূর্ব বাংলায় ইসলামের জ্ঞানের প্রসারের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিলো। একটি হলো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, এবং আরেকটি দারুল উলুম। এই দারুল উলুম প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল লক্ষ্য ছিলো ইসলামকে তথা এর শরীয়াহকে একেবারে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। ১৯৬০ সালে দারুল উলুমের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইসলামিক একাডেমি এবং একে করাচির প্রতিষ্ঠান ‘সেন্ট্রাল ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক রিসার্চ’ এর আওতাভুক্ত করা হয়। ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ এক অধ্যাদেশবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে নতুন করে জন্মলাভ করে। ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধকে সদা জাগ্রত রাখতে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম থেকেই নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্যোগ হলো শিক্ষা ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি গঠন, ইসলামিক মিশন প্রতিষ্ঠা, যাকাত ফান্ড গঠন, পাঠাগার তৈরি, মিডিয়া সেন্টার এবং নানা ইসলামিক বইয়ের প্রকাশনা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বই বলতে মূলত এই প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতায় যে সকল বই প্রকাশিত হয়েছে সেসকল বইকে বোঝায়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বই সমূহ ইসলামের জ্ঞানচর্চাকে ত্বরান্বিত করে আসছে। সাধারণ মুসলিমরা যাতে করে ইসলামের শুদ্ধ জ্ঞানটির খোঁজ পায় সে উদ্দেশ্যেই প্রতিষ্ঠানটির এ মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘তিরমিযী শরীফ (১ম-৬ষ্ঠ খণ্ড)’, ‘ফাতাওয়া ও মাসাইল ১ম ও ২য় খণ্ড’, ‘আল-কুরআনের বিষয়ভিত্তিক আয়াত’, ‘বুখারী শরীফ’, ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’, ‘ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান’, ‘আল-কুরআনুল করীম (আরবিসহ বঙ্গানুবাদ)’ ইত্যাদি। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠান ইসলাম বিষয়ক গবেষণার জন্য মেধানুসারে পুরস্কার ও পদক প্রদান করে থাকে।