মানুষের মনে সময়ে সময়ে জীবন-জগৎ, ইহকাল- পরকাল, আত্মা-পরমাত্মা, জড় প্রকৃতি- মনোজগৎ প্রভৃতি দুর্জ্ঞেয় ও জটিল বিষয়ে প্রশ্ন জাগে। দর্শন ও বিজ্ঞানের আলোকে এসব প্রশ্নেরই আলোচনা করা হয়েছে এই গ্রন্থে। এটি নানা নামে চিহ্নিত এগারোটি রচনার সংকলন হলেও একটি কেন্দ্রীয় বক্তব্যের প্রতিষ্ঠাই লেখকের মূল লক্ষ্য। সেই বক্তব্যটি হচ্ছে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মা-ব্যাপী ‘চৈতন্যের সর্বময়তা’। বস্তুত লেখকের দর্শনভাবনার ভিত্তিই রচিত হয়েছে ‘বিশ্বময় চেতনার’ অস্তিত্বের ওপর। এই চেতনা ও তার প্রাণলীলার প্রকাশ লেখকের মতে কেবল জীবজগতে নয়, জড়জগতেও নিয়ত উপস্থিত। এক গোপন কিন্তু সচেতন প্রেরণার বশবর্তী হয়ে জগৎ-জীবনের সবকিছু অস্তিত্বমান। কেবল দুর্জ্ঞেয় বিষয়ে নয়, এ বইয়ে প্রত্যক্ষীভূত সামাজিক মানুষের ধর্মও নির্ণিত হয়েছে ওই বোধ-বিশ্বাস থেকেই। আর সেই ধর্ম হচ্ছে সার্থকতা সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা নয়, তাকে সকল মানুষের মধ্যে পরিব্যাপ্ত করে দেওয়া। লেখকের আশা ও বিশ্বাস যে, সত্য-ধর্মের এই উপলব্ধি যেদিন মানুষের মধ্যে জাগবে সেদিন পৃথিবীতে হয়তো এমন এক বিরাট গণতন্ত্রের উন্মেষ ঘটবে যেখানে একের অধিকার অন্যের দ্বারা দলিত হবে না, যেখানে ‘উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না।’