প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার যুগকে ধ্রুপদী সভ্যতার যুগ হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। এই পর্বের সভ্যতা বিকাশের ধারাবাহিকতায় ভারত ভূখণ্ডেও নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দেরও আগে। একসময় সভ্যতাটির জনপ্রিয় নাম ছিল ‘সিন্ধু সভ্যতা’। সিন্ধু এবং এর শাখা নদীসমূহের তীরে বিকাশ ঘটায় অমন নাম প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন উৎখননে এই সভ্যতার অভিন্ন সংস্কৃতি ধারণ করা অঞ্চল আবিষ্কৃত হতে থাকে। এরকম অনেক অঞ্চলের সাথে সিন্ধু নদ ও এর শাখা নদীর সংশ্লিষ্টতা তেমন পাওয়া যায়নি। তাই পরবর্তী গবেষকদের অনেকে প্রাচীন ভারতের এই সভ্যতাকে সিন্ধু সভ্যতা বলে সীমাবদ্ধ করে ফেলতে চাননি। সভ্যতাটির সাংস্কৃতিক নিদর্শন ভারতের হরপ্পায় পাওয়া যাওয়ায় অনেকে সভ্যতাটির নামকরণ করতে চেয়েছেন হরপ্পা সভ্যতা বলে। এই নামকরণেও সমস্যা রয়েছে। বর্তমান ভারতের হরপ্পা এবং পাকিস্তানের মহেঞ্জোদারো অঞ্চলে সভ্যতার ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তাই বর্তমান গ্রন্থে বিতর্কিত বাক্য থেকে বেরিয়ে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা বলে উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক মনে করেছেন সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসের সাথে সাথে এই সভ্যতাটির অবসান ঘটেনি। বৈদিক সভ্যতায়ও এর রেশ রয়ে যায়। তাই এই গ্রন্থে ঘটনার পরিসর আরেকটু প্রলম্বিত করতে হয়েছে। ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ ইতিহাস পাঠকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সহজ-সাবলীল ভাষায় ইতিহাস গ্রন্থ লিখে আসছেন। একই লক্ষ্যে প্রাগৈতিহাসিক যুগপর্ব এবং বিভিন্ন সভ্যতা নিয়ে দশটি গ্রন্থ লেখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতার চতুর্থ গ্রন্থ ‘ভারতীয় সভ্যতা’। বইগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে এর অবয়ব বিন্যাস। রঙিন ছবি এবং উন্নতমানের কাগজ ও বাঁধাইয়ের মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। শুধু চিত্তাকর্ষকই নয়, সভ্যতার ইতিহাস উপলব্ধি করতে বিষয় সংশ্লিষ্ট ছবির গুরুত্ব রয়েছে। তথ্যের তেমন ঘনঘটায় না গিয়ে লেখা ও ছবির মধ্য দিয়ে পাঠককে ইতিহাসের ঘটনাবলির সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে এই গ্রন্থে।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।