‘তৃতীয় নেত্র’ শব্দটির সাথে পরিচিতি ছোটবেলা হতেই। কিন্তু তার মর্মার্থ তখন উপলব্ধি করতে পারিনি। একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষ একজোড়া চর্মচক্ষু নিয়ে মাতৃজঠর হতে ধরাধামে আবির্ভূত হয়। তারপর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই চক্ষুযুগল দ্বারা সে ধরাধামের যাবতীয় দৃশ্যমান বস্তুকে অবলোকন করে এবং এই দু’নেত্র ভরে জগতের রূপসুধা পান করে। তবে জগতের দৃশ্যমান বস্তুসকলের রূপ, সৌন্দর্যের কেবল দ্বিমাত্রিক অবয়বটাই এই নেত্রযুগলে প্রতিবিম্বিত হয়। এই দ্বিমাত্রিক অবয়বের বাইরে দৃশ্যের অন্তরালে অদৃশ্যের কোনো চিত্র এই নেত্রযুগলে প্রতিবিম্বিত হয় না, অনুভূত হয় না। চর্মচক্ষুতে যা দৃশ্যমান নয়, দৃষ্টির অন্তরালবর্তী সেই বিষয়কে এই তৃতীয় নেত্র বা জ্ঞাননেত্রের মাধ্যমে অবলোকন বা অনুভব করতে হয়। এই নেত্রের শক্তি যার যত প্রখর, তিনি তত নিবিড়ভাবে অন্তরালবর্তী এই রহস্যের গভীরতাকে পরিমাপ ও উপলব্ধি করতে পারেন। ফলে চর্মচক্ষুর দর্শন যেখানে শেষ হয়ে যায়, তৃতীয় নেত্রের দর্শন কার্যক্রম সেখান থেকে শুরু হয়। এই তৃতীয় নেত্রের মাধ্যমে দর্শনশক্তি সকলের একরূপ নয়। অনেকের সারাজীবনে এই নেত্র প্রস্ফুটিতও হয় না। ঝিনুকের প্রদাহের ফলে মুক্তার সৃষ্টি হয়। চতুর্পার্শ্বের বিভিন্ন দৃশ্যমান বাস্তবতা আমাকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে চমকিত করেছে, বিস্মিত করেছে, কাতর করেছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমি এর অদৃশ্য, নেপথ্যচারী রহস্যের গভীরতাকে দর্শন কিংবা উপলব্ধির চেষ্টা করেছি।