সৌন্দর্যকে জবরদস্তিমূলক ভোগের আকাঙ্ক্ষার নাম বিকৃতি। আর যে এ বিকৃতিকে নিয়ন্ত্রণে অক্ষম তাকেই বলে বর্বর। কবি হলেন বর্বরের বিপরীত সত্ত্বা। যিনি সৌন্দর্য ভোগের বা উপভোগের ইচ্ছাকে মনুষ্যত্বের দৃষ্টিতে স্থির করেন। যাকে বলা হয় স্বপ্ন বা বাসনা। কবির এরূপ সৌন্দর্য উপভোগের ইচ্ছা যখন নারী বা পুরুষকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়, তখন কবির বাণী হয়ে উঠে প্রেমের কবিতা। কবি রাহিদুল ইসলাম তাঁর ‘নৈঃসঙ্গ্যের ঘুঙুর’ কাব্যে প্রেমের কবিতাগুলোয় কবি হৃদয়ের একান্ত ব্যক্তিগত ভাবাবেগ, আত্মমগ্ন অনুভবের তীব্রতা, মোহনীয় শব্দশৈলী এবং সুরের অন্তর্লীন স্পর্শ দিয়ে কোন এক নারী মূর্তিকে এক বা একাধিক নামে সার্বজনীন প্রেমিকা করে তুলেছেন। ‘নৈঃসঙ্গ্যের ঘুঙুর’ কাব্যের কবিতাগুলো প্রেম-শব্দ-ছন্দ-সুর-লয়-তাল মিলে সংক্ষিপ্ত ও সংহত অবয়বে এক সমন্বিত শিল্পরূপ লাভ করেছে। সামগ্রিক রাগ-অনুরাগ, মান-অভিমান, স্মৃতি- বিস্মৃতিকে কবি ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় জাড়িত করে রচনা করেছেন হৃদয় স্পর্শী প্রেমের কবিতা। এসব কবিতা ব্যক্তিগত বস্তুনিষ্ঠতা সত্ত্বেও সার্বজনীন আবেদন ও মূল্য লাভ করেছে। এ কাব্যের কবিতায় কবিতায় ছড়িয়ে আছে প্রেমের অনুরণন, সৃজন, বিকাশ, পরিণতি; সর্বোপরি একটি উচ্চমার্গীয় প্রেম কেন্দ্রিক হৃদয় দহনের সুতীব্র দুঃখবোধ। যারা যৌনতাকে বিকৃতি আর প্রেমকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করতে ভালোবাসেন, তাদের জন্যে ‘নৈঃসঙ্গ্যের ঘুঙুর’ একটি সুখপাঠ্য গ্রন্থ হবে বলেই আশা করছি।