টিপ-টিপ বৃষ্টি-ঝরা জুলাইয়ের সন্ধ্যা। বাংলা দিনপঞ্জির হিসেবে শ্রাবণ মাস। থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে গত তিন-চারদিন ধরে। হয়তো সকালে আকাশ কালো করে এলো, তারপর ঝিরঝির করে শুরু। ঝমঝম করে এক পশলা ঝর... See more
TK. 400 TK. 344 You Save TK. 56 (14%)
কমিয়ে দেখুন
বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইন বাণিজ্য মেলা রকমারিতে। ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে 100+ Bundle Deal, Buy1 Get1, আর Free Shipping নির্দিষ্ট পণ্যে!
বাংলাদেশে এই প্রথম অনলাইন বাণিজ্য মেলা রকমারিতে। ১ লক্ষাধিক পণ্যে ৭৫% পর্যন্ত ছাড়! সাথে 100+ Bundle Deal, Buy1 Get1, আর Free Shipping নির্দিষ্ট পণ্যে!
টিপ-টিপ বৃষ্টি-ঝরা জুলাইয়ের সন্ধ্যা। বাংলা দিনপঞ্জির হিসেবে শ্রাবণ মাস। থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে গত তিন-চারদিন ধরে। হয়তো সকালে আকাশ কালো করে এলো, তারপর ঝিরঝির করে শুরু। ঝমঝম করে এক পশলা ঝরে যাওয়ার পর একটা গুমোট ভাব হয়ে থাকে। প্রতিদিনের একই ব্যাপার। আজ সন্ধ্যায় তাও একটু বাতাস আসছে যেন কোথা থেকে। সারাদিন বাতাসের কোনো চিহ্ন ছিল না। মাথার উপরে মেঘ-কালো আকাশ, আর পায়ের তলে প্যাঁচপ্যাঁচে কাদাজমা রাস্তা। বহুদিন হলো শ্যামল দেশের রাজধানী ধূসর হয়ে গেছে। তার অধিকাংশ সড়কেই কোনো-না-কোনো কাজ খনন কাজ চলে। এদিকে পানি সরবরাহ কোম্পানি, ওদিকে গ্যাস কোম্পানি। কোথাও কোথাও বা ভাঙা সড়ক মেরামতের কাজ। খুঁড়ে রাখা সড়কে তাই কাদার আধিক্য। এমন এমন জায়গা আছে যেখানে পা রাখলে চোরাবালির মতো ডুবে যায়। হেঁটে চলা দুষ্কর। ওদিকে যে কোনো বাহনে চড়বে মানুষ, সে উপায়ও নেই। যানজটে শহরবাসী নাকাল, খোঁড়া রাস্তার কল্যাণে এখন সব স্থবির।
জন্ম ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে, কীর্তনখোলা নদীর তীরে, বরিশাল শহরে। নদীর অন্য পাড়ে দিনার গ্রামে পিতৃপুরুষের ভিটা। সেখানেই শৈশবের কিছু অংশ কেটেছিল। অতঃপর ছয় বছর বয়সে পিতামাতার হাত ধরে রাজধানীতে আগমন। শিক্ষাজীবন শুরু মায়ের কাছে। এরপর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে, স্কুল জীবনের দশ বছর কাটিয়ে বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ অধ্যয়নরত। লেখালেখির সূচনা ভালোলাগা থেকে। ইচ্ছে ছিল দু’ একটা গল্প লেখার। লিখতে লিখতে একটা উপন্যাসও হয়ত কখনও দাঁড়িয়ে যাবে, এ আশাও ছিল। কিন্তু কেমন করে যেন গল্প থেকে ইতিহাসের পথে চলা শুরু। হয়ত ইতিহাসের ভেতরে অনেক গল্প থাকে বলেই এ যাত্রায় এতো আগ্রহ। ইতিহাস থেকে এখন ছোটগল্প, উপন্যাস, সমালোচনা; লেখালেখি চলছেন। লিখেছেন বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে, জাতীয় দৈনিকে। সবকিছু সঙ্গে করে অনেকদিন লিখে যাওয়ার ইচ্ছা।
‘রঙ মিলান্তি’ কত সুন্দর নামটা না, আদতে এই রঙের মাঝে লুকিয়ে আছে কত পাওয়া না পাওয়ার হিসাব। কত ব্যর্থতার গল্প!
নব্বই দশকে যাদের জন্ম তারা বর্তমান সময়ের নতুন প্রযুক্তির যুগে এসে হিমসিম খাচ্ছে। মিলাতে পারছে না ২জি থেকে একদম ৫জি থেকে চলে আসাটা দুনিয়ার সাথে। আমাদের বড়দের কাছ থেকে প্রায় একটা কথা শুনি ‘এই প্রজন্মের ছেলে পেলেদের দিয়ে কিছু হবে না’। আমরা না দেখেছি কোনো যুদ্ধ, না দেখেছি কোনো আন্দোলন। মানুষের কষ্টে অর্জিত অর্জণের মর্ম কিভাবে বুঝবো। সারাদিন শুধু মাথা নিচু করে পিউ পিউ করে মোবাইল বা কম্পিউটার টিপি’!
সত্যিই কি তাই? দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পরে যা কেউ করতে পারেনি, কিন্তু এই প্রজন্মের ছেলে পেলেরা তা করে দেখিয়েছে। ৪৭ বছর পর মহাসড়কে ইমার্জেন্সি লেন তৈরি করে দেখিয়েছি। কাছাকাছি সময়তে আমরা বড় বড় তিনটা ছাত্র আন্দোলন দেখেছি। অনলাইনের নীল সাদা দেয়ালে একটা চিৎকারে শাহবাগে জড় করেছি লাখ মানুষের ঢল। ভাষা আন্দোলনে অংশ নিতে না পারি, কিন্তু কোঠা আন্দোলন তো করেছি? কে বলল আমরা পারি না!
গল্পের নাদিম চরিত্রটি পুরো গল্প জুড়ে এই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে চলে। নাদিমের বন্ধু আরিফ, শিহাব, সৌম্য, রিক্তা, বেলা এরা প্রত্যকেই যেনো আমাদেরই কারো না কারো প্রতিচ্ছবি।
উপন্যাসে ফুটে উঠেছে নব্বই দশকের ঢাকাশহের চিত্র। সেই সাথে সেই সময়কার প্রজন্মের মধ্যকার চিন্তার একটি জগৎ। নাদিম তার সব বন্ধুদের মাঝে থেকেও একা, বেলার সাথে আরিফের খুনসুটি পূর্ণ প্রেম, কারো আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মতান্ত্রিক মহা জটিলতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। এই সব কিছু নিয়েই নব্বই দশকের প্রজন্ম ধিকিধিকি করে এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে। করে যাচ্ছে অবিরাম পাওয়া না পাওয়ার জটিল হিসাব। ‘সাদা’ ‘কালো’ রঙ দিয়ে করে যাচ্ছে ‘রঙ মিলান্তি’। আর গড়ে দিয়ে যাচ্ছে বর্তমান প্রজন্মকে রেডিমেড দুনিয়া।
***
মোদ্দা কথা উপন্যাসটি নব্বইদশকের কেউ পড়লে অবশ্যই আবেগাপ্লুত হবে। তিনিও করবেন হিসাব নিকাশ। সবচেয়ে ভালোলাগার বিষয় হচ্ছে তারা তাদের চির পরিচিত শহরটাকে যেন একদম চোখের সামনে থেকে দেখবে।
মোগলনামা ১ -২, রাধেয় বই তিনটি লেখক ‘মাহমুদুর রহমান’ ইতোমধ্যেই পাঠক মহলে পরিচিত অর্জণ করেছেন। উনার পাঠক ধরে রাখা লেখনি সত্যিই প্রশংসা যোগ্য। তার এই ধারাবাহিকতায় বজায় রেখে তিনি বের করলেন বর্তমান বই ‘রঙ মিলান্তি’ এবং ‘শকুনি উবাচ’।
বর্তমান বইটি বের হয়েছে ‘নালন্দা প্রকাশনী’ থেকে। প্রডাকশন ভালো।
সময়কে আঁকা যায়, লেখা যায়, বানানো যায় ভাস্কর্যের মতো করে। শিল্পীদের এই ক্ষমতাটা আছে- ‘সময়ের’ নিজস্ব কিছু রঙ থাকে- ধূসর, খয়েরি, লাল, সাদা কিংবা কালো । সাদা সময় সবচেয়ে ভয়ানক- কারণ সাদা একা নয়- সাদা অনেক রঙের সমষ্টি। আর কালো? কালো কোনো রঙ নয় আসলে- রঙের অনুপস্থিতিই আসলে ‘কালো।’ সময়ের নিজস্ব রঙের সাথে শিল্পী যোগ করেন আরো কিছু।
‘রঙ মিলান্তি’ নামের যে উপন্যাসটা আমি পড়লাম সেখানে সময়কে স্কেচ করা হয়েছে- যে সময়টাতে আমি নিজেই টগবগে তরুণ। বর্ণিত সমস্ত ঘটনার প্রত্যক্ষ করেছি। পিচঢালা রাস্তায় লাল রঙ দেখেছি, অশ্রুজলে আকাশের মেঘের রঙ দেখেছি। বইয়ের লেখক আমাকে সেসব আবার দেখিয়েছেন।
আন্দোলনের সময়টাতে কিছু তরুণ চোখ মেলে তাকিয়ে আছে, কেউ সামিল হচ্ছে স্রোতে, কারো মস্তিষ্ক পাজলের মতো রঙ মেলাতে ব্যস্ত- প্রেম, বিচ্ছেদ, চুমু, সিগারেট, ফুল কিংবা গাঁজা- একটা জেনারেশনের ক্যানভাসের অনেকটা রঙ বইয়ের পাতা থেকে ছিঁটকে এসে আমার মুখে লেগেছে।
আমি ‘উপভোগ’ করেছি, বলা ভালো ‘ভোগ’ করেছি- কারণ আমাকে খুঁজতে হয়েছে- আমি যে রঙ নিয়ে খেলেছিলাম সেই সময়টাতে – সেটা কোথাও খুঁজে পাই কিনা! আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে, আমাকে ‘নাদিমের’ সাথে শাহবাগ ঘুরতে হয়েছে, এক দেশলাইয়ের কাঠি দিয়ে দুটো সিগারেট ধরাতে হয়েছে। আমার ভালো লেগেছে এই সঙ্গ। তবে হ্যাঁ, একজন লেখক যখন সময়কে নিয়ে এমন সাহসী কাজ করেন- তখন সেই সময়ে চরিত্ররা কেমন ছিলো-কেবল এটা দেখানোই লেখকের কাজ না, বরং চরিত্রদের কেমন হওয়া উচিৎ এটা দেখানোও কাজ।
‘রঙ মিলান্তি’তে অনেক রঙ আছে। যেখানে যে জিনিসটার আধিক্য থাকে তখন সেই জিনিসটা আর দৃষ্টিগোচর হয় না। অধিক সূর্যের আলোতে আমরা সূর্যকে দেখতে পাই না। ‘রঙ মিলান্তি’ তাই একই সঙ্গে ‘সাদা’ এবং ‘কালো’ রঙের বই- যা আজ থেকে দলিল হয়ে থেকে গেলো, থেকে যাবে।