হিজরি সপ্তম শতক। তখন মধ্য-এশিয়ার সবচেয়ে বড় মুসলিম সাম্রাজ্য খাওয়ারিজম। পামির মালভূমি থেকে কুহেকাফ এবং কাসপিয়ান সাগর থেকে সিন্ধুতীর পর্যন্ত—বিশাল ভূ-খণ্ডজুড়ে বিস্তৃত ছিল এ সাম্রাজ্য। আয়তন, প্রাচুর্য, জ্ঞানবিজ্ঞান, সামরিক শক্তি এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক দিয়ে খাওয়ারিজম সাম্রাজ্য ছিল তখনকার অন্যান্য মুসলিম সাম্রাজ্য থেকে একধাপ এগিয়ে। এর অধিপতিদের উপাধি ছিল খাওয়ারিজম শাহ। সুলতান আলাউদ্দীন খাওয়ারিজম শাহ ছিলেন এ সাম্রাজ্যের একজন শক্তিধর শাসক। সুলতান আলাউদ্দীন তখন খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের অধিপতি। মুসলিমবিশ্বের দীপ্তবর্ণ পতাকাখচিত আকাশে হঠাৎ দেখা দিল এক মহাবিপর্যয়ের ঘনঘটা। মাটি ফুঁড়ে উঠে এলো রক্ত আর সাম্রাজ্যের নেশায় উন্মত্ত একদল হায়না। কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীবাসী যাদের ঘৃণাভরে স্মরণ করবে তাতার নামে। তাদের সর্বগ্রাসী আগ্রাসন নাড়িয়ে দিয়েছিল ইসলামি সাম্রাজ্যের ভিত। পাশবিক শক্তির নারকীয় তাণ্ডবে তারা একের পর এক মুসলিম শহর পদানত করেছিল। সেসময় রক্তচোষার বুভুক্ষা নিয়ে তাতাররা যখন অপ্রতিহত ডাঙ্গর হয়ে উঠছিল, তখনই লিল্লাহি বলে বলীয়ান হয়ে অমিত তেজে জ্বলে উঠলেন আলাউদ্দীনের গুণধর পুত্র সিংহহৃদয় সুলতান জালালুদ্দীন খাওয়ারিজম শাহ। ইসলামি ইতিহাসে যিনি বরিত হয়ে আছেন একজন জানবাজ মুজাহিদ এবং বিস্ময়পুরুষ হিসেবে। তাতার আগ্রাসনের ধ্বংসযজ্ঞ সময়ের মুখগহ্বর থেকে তিনি মুসলিম উম্মাহকে উদ্ধার করে দেখিয়েছেন প্রতিরোধের প্রথম আলো। সে আলো গায়ে মেখে তাঁর পরবর্তী অনেক জানবাজ মুজাহিদ জিহাদ চালিয়েছেন তাতারদের বিরুদ্ধে। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের ইতিহাস—এ বই সেই বিপর্যস্ত সময়েরই করুণ গল্পগাথা; ইতিহাসের দর্পণে মুসলিম উম্মাহর জীবন ও সময়কাল নিরীক্ষণের এক মহামূল্যবান প্রমাণ। এ সময়ের উর্দুসাহিত্যের একজন শক্তিমান ও সত্যানুসন্ধানী লেখক ও ইতিহাসবিদ মাওলানা ইসমাইল রেহান-এর কলমে নির্মোঘ সত্যের নিরেট বয়নে ফুটে উঠেছে খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের পুরো ইতিহাস, প্রচলিত ইতিহাসে অনুল্লিখিত অজানা অনেক অধ্যায়, সুলতানদের জীবনগাথা, জান্তব তাতারদের ভয়াবহ আগ্রাসন, তাদের আক্রমণের মূল কার্যকারণ, পরিণতি ও প্রতিক্রিয়া এবং সময় ও সমাজের নানারূপতা।
নাম মুহাম্মদ ইসমাইল। ‘ইসমাইল রেহান’ তার কলমি নাম। হাফেজ, মাওলানা। জন্মেছেন করাচীতে। পহেলা ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১। বাবা আব্দুল আজিজ। তার পূর্বপুরুষরা দেশভাগের সময় ইসলামি দেশে বসবাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাকিস্তানে হিজরত করেন। করাচীর পুরনো গোলিমার এলাকায় বড় হয়েছেন। মায়ের কাছে দ্বীনিয়াত বিষয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলে ফরমাল এডুকেশন গ্রহন করেন। ১৯৮৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন দারুল উলুম করাচীতে। বাহাদুরাবাদের জামেয়া মা’হাদুল খলীল আল ইসলামী থেকে ১৯৯৫ সালে তাকমীল সমাপন করেন। এর মাঝে আল্লামা আবদুর রশীদ নু’মানীর শিষ্যত্ব অর্জন করেন। তারপর ২০০৬ সালে করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বি.এ (সম্মান) এবং ২০১০ সালে করাচীর উর্দু বিশ্ববিদ্যালয় (FUUAST) থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমাপ্ত করেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন। ‘যরবে মুমিন’ ও ‘রোজনামা ইসলাম’ পত্রিকায় কলাম লিখে বিখ্যাত হয়েছেন। ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত মাসিক সুলূক ও ইহসান পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। শিশুদের জন্য প্রকাশিত একটি পত্রিকা ‘বাচ্চোঁ কা ইসলাম’ ও নারীদের নিয়ে প্রকাশিত ‘খাওয়াতিন কা ইসলাম’ পত্রিকার সম্পাদনা র সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।