বর্তমান সময়কে চিকিৎসাব্যবস্থার উৎকর্ষ সময় বলা যায়। প্রায় সব রোগেরই উন্নত চিকিৎসাপদ্ধতি বের হয়েছে। আমরা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। একইসঙ্গে সুস্থতার জন্য নানাবিধ ব্যবস্থা নিচ্ছি। শারীরিক সুস্থতার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আমরা কোনো ধরনের ত্রুটি করছি না। অথচ শরীরের যেমন রোগব্যাধি হয়, অন্তরও রোগব্যাধি থেকে মুক্ত নয়। প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন রকম অন্তরের রোগে আক্রান্ত হই। বিভিন্ন জটিল রোগ বাসা বেঁধে আমাদের সুস্থ আত্মাকে অকেজো করে ফেলে। রোগের তীব্রতায় আমাদের মধ্যকার ভাল ও সৎ গুণগুলো হারিয়ে যায়। সে জায়গায় স্থান করে নেয় হিংসা-বিদ্বেষ ও রিয়ার মতো ধ্বংসাত্মক ব্যাধি। কিন্তু সে জন্য আমরা কোনো ধরনের চিকিৎসার কথা ভাবি না। অনেকেই এই রোগগুলোকে অবহেলা করে এড়িয়ে যায়। কেউ কেউ তো জানেই না, শরীরের মতো অন্তরের রোগেরও চিকিৎসা করতে হয়। অথচ অন্তরের সুস্থতা শরীরের সুস্থতার চেয়েও বেশী জরুরী। শরীর অসুস্থ থাকলেও অন্তর সুস্থ থাকতে পারে। কিন্তু অন্তর অসুস্থ হলে সুস্থ শরীরও আমাদের কোন কাজে লাগবে না। অন্তরের রোগ কেমন হতে পারে অথবা অন্তরের রোগের প্রকার ও ধরন কতটি—এসব রোগ থেকে সুস্থতার জন্য কী কী পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ‘রূহের চিকিৎসা’ গ্রন্থটিতে শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়ার দীর্ঘ ও প্রয়োজনীয় আলোচনা রয়েছে। আলোচনাগুলো পাঠকের সুবিধার্থে মজলিস আকারে সাজানো হয়েছে। একজন মুসলিম হওয়ার পরও ইচ্ছায় অনিচ্ছায় আমরা বিভিন্ন আত্মিক রোগে আক্রান্ত হই। যার ফলে আমাদের সমস্ত ইবাদাহ, সকল আমল অর্থহীন হয়ে যায়। এই সব বিষয়গুলো নিয়ে ইমাম ইবনু তাইমিয়ার যুক্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ আলোচনা পাওয়া যাবে গ্রন্থটিতে। বইয়ের বিভিন্ন আলোচনায় স্পষ্টভাবে অন্তরের হাল হাকিকত তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি তা থেকে উত্তরণের ব্যবস্থাপত্রও বলে দেয়া হয়েছে। এই গ্রন্থটিকে মুসলিম উম্মাহর আত্মিক ব্যাধি ও প্রতিকারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলা যায়। একজন তরুণের জন্য, একজন বৃদ্ধের জন্য—বলা যায়, সকল মুসলিমের জন্যই এই বইটি পড়া জরুরী।
ইবন তাইমিয়া ছিলেন মধ্যযুগের একজন বিশিষ্ট হাম্বলী ফকিহ, মুহাদ্দিস, ধর্মতাত্ত্বিক ও যুক্তিবিদ। তাঁর পুরো নাম তকিউদ্দিন আবুল আব্বাস আহমদ ইবন আব্দুল হালিম ইবন মাজদুদ্দিন আব্দুস সালাম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আবুল কাসিম আল খিদর ইবন মুহাম্মদ ইবন আল খিদর ইবন আলি ইবন আব্দুল্লাহ ইবন তাইমিয়া আন নুমায়রী আল হাররানি আদ দিমাশকি।তিনি দামেস্কের নিকটবর্তী হাররান শহরে সোমবার ১০ রবিউল আউয়াল ৬৬১ হি:/ ২৩ জানুয়ারি, ১২৬৩ খ্রি. ধর্মীয় জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যবাহী এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা মাজদুদ্দীন আব্দুস সালাম ও বাবা শিহাবুদ্দীন আব্দুল হালিম উভয়েই হাম্বলী মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ ছিলেন। তাঁর পূর্বপুরুষ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল্লাহ একজন বিশিষ্ট বুযুর্গ ও যাহিদ ছিলেন। ইবন খাল্লিকানের মতে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আবদাল ও যাহিদদের অন্যতম। ইমাম যাহাবির মতে, তিনি পরিণত বয়সে আসার আগেই ফাতওয়া দান, ধর্মীয় বিতর্ক ইত্যাদিতে অসাধারণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। ইবন কাসিরের মতে তিনি সতেরো বছর বয়সে গ্রন্থ রচনা শুরু করেছিলেন।