আলি ইবনু আবি তালিব রা.। চতুর্থ খলিফায়ে রাশিদ। গ্রন্থটিতে তাঁর পরিচিতি, ইসলামগ্রহণ, রাসুলের সঙ্গে কাটানো শৈশবকাল, তাঁর সঙ্গে রাসুল সাঃ কীভাবে আচরণ করতেন, সেগুলোও আলোচনায় এসেছে। বদর, উহুদ, খন্দক, বনু কুরাইজা, হুদায়বিয়া, খায়বার, মক্কাবিজয়, হুনাইনের যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁর কৃতিত্ব ও ভূমিকা নিয়ে গবেষণালব্ধ আলোচনা করা হয়েছে। আবু বকর, উমর ও উসমান রা.-এর খিলাফতকালে তাঁর ভূমিকার পাশাপাশি শুরার ব্যাপারে ভণ্ড রাফিজিদের মিথ্যাচারেরও খণ্ডন করা হয়েছে। আলোচনা করা হয়েছে তাঁর বায়আত, মর্যাদা, গুণাবলি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মূলনীতিসমূহ। তাঁর জ্ঞান, আত্মত্যাগ, বিনয়, লজ্জা ও দানশীলতা, ইবাদত, ধৈর্য ও ইখলাস ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। জঙ্গে জামাল ও সিফফিনের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। গ্রন্থের শেষ দিকে রাফিজি, খারিজিসহ বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদ বিষয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর যুগে ধর্মে বাড়াবাড়ি, দীন সম্পর্কে উদাসীনতা, মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা, কবিরা গুনাহে লিপ্ত মুসলিমদের কাফির বলা, মুসলিমদের হত্যা ও তাঁদের সম্পদ হালাল ঘোষণা করা, নির্বিচারে গালিগালাজ করা, কতেক সাহাবিকে গালমন্দ ও নিন্দা করা এবং উসমান ও আলিকে কাফির সাব্যস্ত করা—ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক সাহাবির জীবনী এবং বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়িল সম্পর্কেও আমরা জানতে পারব। জানতে পারব ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ ও পদ্ধতি সম্পর্কে।
ফকিহ, রাজনীতিক ও বিশ্বখ্যাত ইতিহাসগবেষক। ইসলামের ইতিহাসের উপর বিশ্লেষণধর্মী তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই মহা মনীষী ১৯৬৩ সনে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা বেনগাজিতেই করেন। যৌবনের প্রারম্ভেই গাদ্দাফির প্রহসনের শিকার হয়ে শায়খ সাল্লাবি আট বছর বন্দি থাকেন। মুক্তি পাওয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি সাউদি আরব চলে যান। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়া ও উসুলুদ্দিন বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সনে অনার্স সম্পন্ন করেন। তারপর চলে যান সুদানের উম্মু দুরমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে উসুলুদ্দিন অনুষদের তাফসির ও উলুমুল কুরআন বিভাগ থেকে ১৯৯৬ সনে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯৯৯ সনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ‘ফিকহুত তামকিন ফিল কুরআনিল কারিম’। ড. আলি সাল্লাবির রাজনৈতিক দীক্ষাগুরু বিশ্বখ্যাত ফকিহ ও রাজনীতিক ড. ইউসুফ আল কারজাবি। কারজাবির সান্নিধ্য অর্জনে তিনি ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে কাতার গমন করেন। নতুন ধারায় সিরাত ও ইসলামি ইতিহাসের তাত্ত্বিক গ্রন্থ রচনা করে ড. আলি সাল্লাবি অনুসন্ধিৎসু পাঠকের আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নবিজির পুর্ণাঙ্গ সিরাত, খুলাফায়ে রাশিদিনের জীবনী, উমাইয়া খিলাফত, আব্বাসি খিলাফত, উসমানি খিলাফতের উত্থান-পতনসহ ইসলামি ইতিহাসের সাড়ে তেরোশ বছরের ইতিহাস তিনি রচনা করেছেন। তা ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করা ব্যক্তিদের নিয়ে তিনি আলাদা আলাদা গ্রন্থ রচনা করেছেন। ড. আলি মুহাম্মাদ সাল্লাবির রচনা শুধু ইতিহাসের গতানুগতিক ধারাবর্ণনা নয়; তাঁর রচনায় রয়েছে বিশুদ্ধতার প্রামাণিক গ্রহণযোগ্যতা, জটিল-কঠিন বিষয়ের সাবলীল উপস্থাপনা ও ইতিহাসের আঁকবাঁকের সঙ্গে সমকালীন অবস্থার তুলনীয় শিক্ষা। এই মহা মনীষী সিরাত, ইতিহাস, ফিকহ ও উলুমুল কুরআনের উপর আশির অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর রচনাবলি ইংরেজি, তুর্কি, ফরাসি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে পৃথিবীর জ্ঞানগবেষকদের হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘ, নিরাপদ ও সুস্থ জীবন দান করুন। আমিন। —সালমান মোহাম্মদ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক ২৪ মার্চ ২০২০