"মুজাহিদের তলোয়ার" বইয়ের পেছনের কভারের লেখা: একদিকে রাজা-বাদশারা বিলাসী জীবন যাপন করার জন্য জনগণের রক্ত শােষণ করছিল আর অন্যদিকে কবি-সাহিত্যিকরা রাজাদের উদারতা ও দানশীলতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। রাজাগণ শরাব পান, ইসলাম-বিরােধিতা ও বেহায়াপনাকে তাদের অঙ্গের ভূষণে পরিণত করেছিল । দরবারি কবি-সাহিত্যিকগণ সব সময় রাজাদের তাকওয়া ও পরহেজগারীর প্রশংসা করত। তােষামদকারী ও স্বার্থপর কবি-সাহিত্যিকগণ নিজেদের স্বার্থোদ্ধারের জন্য অহেতুক প্রশংসা করে শাসকদের মন-মগজে এমন ধারণা সৃষ্টি করে দিয়েছিল যে, জনগণের ভাল কথাও তাদের নিকট গালি বলে বিবেচিত হতাে। যে জাতি সত্য ও ন্যায়নিষ্ঠা থেকে বিচ্যুত হয়, সে জাতির মধ্যেই মামুন জানুন, ইয়াহইয়া আল কাদির ও ইবনে আক্কাশার মতাে শয়তান জন্মায় এবং তারা মানুষের আবাসস্থলকে তছনছ করে দেয় । এমতাবস্থায় আল্লাহতায়ালাও ঐ জাতির ওপর থেকে তার সাহায্যের হাত তুলে নেন এবং ঐ জাতি দ্রুতগতিতে পতন ও ধ্বংসেরর পথে এগিয়ে যায়। আর যে জাতি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে আল্লাহর পথে অবিচল থাকে, তাদের মধ্যে আল্লাহতায়ালা তারিক (রহ) ও আব্দুর রহমান (রহ)-এর মত নেতা ও সেনাপতির জন্ম দেন । দুনিয়ার সমরাঙ্গনে বিজয়ের পর বিজয় তাদের পদচুম্বন করে এবং জাতির প্রতিটি পদক্ষেপই তাদের উন্নতি ও অগ্রগতির পথে চালিত করে । একসময় শাসকগণের অযােগ্যতা ও চেতনাহীনতার কারণে মুসলমানরা অবনতির গভীরতম গহ্বরে পৌঁছে গিয়েছিল । ইসাবেলার সৈন্যবাহিনী কর্ডোভা ও গ্রানাডার সদর দরজায় পদাঘাত করেছিল। তবে আল্লাহ আমাদের সমূলে ধ্বংস করতে চাননি। আফ্রিকার মরুভূমি থেকে এক মুজাহিদ উঠে দাঁড়ালেন। তিনি এগিয়ে এসে জুলুম ও নির্যাতনরূপী তুফানের মােড় ঘুরিয়ে দিলেন। তাই সেদিন আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম । আজ ঐ শহীদদের কথা স্মরণ করুন যারা নিজেদের পবিত্র রক্তে স্পেনের নতুন ইতিহাস রচনা করে গেছেন । আজ সে সব দরদী ভাইদের স্মরণ করুন, যারা ঘাের অন্ধকারে রাজনীতিতে প্রবল ঝড়-তুফানকে অগ্রাহ্য করে সত্য ও ন্যায়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছিলেন। ঐ বীর মুমিনদের স্মরণ করুন, যারা সত্য ও ন্যায়ের আওয়াজ উঠানাের দরুন ফাঁসিকাষ্ঠে জীবন দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারা নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করেছিলেন ইসলামের পতাকা সমুন্নত করার জন্য। আল্লাহর জমিনে আল্লাহরই আইন প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যেই তারা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। শহীদদের আনীত সেই স্বাধীনতা রক্ষা করা এক পবিত্র আমানত । আমরা আন্তরিক নিষ্ঠা সহকারে শপথ করি এই পবিত্র আমানত কখনও নষ্ট হতে দেব না। দেহের রক্ত নিঃশেষ করে শহীদগণ ইসলামের যে মহীরূহ রােপণ করে গেছেন, তাকে আমরা কখনও আর চৈত্রের খরতাপে শুকিয়ে মরতে দেব না। তারা এ দেশকে আমাদের সকলের জন্য শান্তি ও কল্যাণের আগার দেখতে চেয়েছিলেন । আমরা এই দেশে আর কখনও জালেমদের জুলুম-নির্যাতনের প্রশ্রয় দেব না । শহীদগণ আমাদের আজাদীর নেয়ামত দিয়ে সমৃদ্ধশালী করে গেছেন । আমাদের বংশধরদের জন্য আমরা গােলামীর ও লাঞ্ছনার জাহান্নাম রেখে যাব না। নসীম হিজাযীর মর্মন্তুদ ঘটনাবহুন অসাধারণ একটি ঐতিহাসিক মুজাহিদের তলােয়ার।
Nosim Hijajee শরীফ হুসাইন (ছদ্মনাম নসিম হিজাজী হিসাবে বেশি পরিচিতি, জন্ম:১৯১৪ - মৃত্যু: ২ মার্চ ১৯৯৬) হলেন একজন পাকিস্তানি উপন্যাসিক ও লেখক, যিনি লেখালেখির সময় নসিম হিজাজি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। বাল্য ও কৈশোর কাল গ্রামে কাটলেও তার সোনালী যৌবনটুকু দখল করে আছে ঐতিহাসিক লাহোর শহর। এখানেই তিনি লেখাপড়া করেন এবং লাহোর ইসলামীয়া কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে ডিগ্রী পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি একজন উর্দু ভাষার লেখক। হিজাজী পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার ধারওয়াল শহরের পাশের একটি গ্রাম সুজানপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পূর্বেই ১৯৪৭ সালে তার পরিবার লাহোরে বসবাস শুরু করে। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় পাকিস্তানে কাটিয়েছেন এবং ১৯৯৬ সালের ২ মার্চ তারিখে ইন্তেকাল করেন।