আঞ্চলিক শব্দের যে বহুরূপতা তা নানা গল্প, কবিতা, গানে প্রকাশ পায়। ‘ফৈড়ল’ তেমনি একটি আঞ্চলিক শব্দ। এ শব্দটি ব্যবহার হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে। ফড় থেকে ফৈড়ল শব্দটি এসেছে। যার অর্থ সজাগ বা পাহারা। বইয়ের নাম ‘ফৈড়লের নাও’। তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায় ‘পাহারাদারের নৌকা’। মাঈন উদ্দিনের এ গল্পের বইটিতে রয়েছে এগারোটি গল্প। ৬৪ পৃষ্ঠার বইটির প্রথম গল্পটিই ‘ফৈড়লের নাও’। এ গল্পে উঠে এসেছে হাওড়ের এক করুণ ও ভয়াবহ চিত্র। তুরাব আলীর কিশোর ছেলে দুলাল। মাছ ধরেই এদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। কিন্তু হাওর দখল করে রাখে একদল নরপশু। তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করে এইসব সাধারণ গরীব মানুষের জীবন। তুরাব আলী তার ছেলেকে নিয়ে লুকিয়ে মাছ ধরতে যায়। কিন্তু ধরা পড়ে যায় ফৈড়লদের হাতে। পুত্রের সামনে পিতাকে ধরে নিয়ে যায় ওরা। গালাগাল আর মারধর করে। দুলাল এ অপমান, এ অবিচার সহ্য করতে পারে না। প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে ফৈড়লের দল। ফৈড়লরা দুলালকে ফেলে দেয় নৌকা থেকে। নৌকায় ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা করে দুলাল। কিন্তু কোনো উপায় পায় না। ফৈড়ল সর্দার হিংস্র পশুতে পরিণত হয়। দুলালের মাথার ওপর গুলি চালায়! হাওরের স্বচ্ছ পানি দুলালের রক্তে রঙিন হয়ে ওঠে। তুরাব আলী অজ্ঞান হয়ে যায় পুত্রের সাথে এমন নির্মমতার দৃশ্য দেখে। এমন অসংখ্য ঘটনার একটি ঘটনা এটি। এসব শুধু গল্পই না, গল্পের আড়ালে বাস্তবতার প্রমাণপত্র ‘ফৈড়লের নাও’ । গল্পকার হিসেবে মাঈন উদ্দিন যে দক্ষ ও কৌশলী তা তার গল্প পাঠ করলে বোঝা যাবে। বিভিন্ন আকারে ও বিভিন্ন ঢঙে তিনি গল্পগুলো পাঠকের জন্য লিখেছেন। হাওড় অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ও এ অঞ্চলের প্রকৃতিই তার গল্পগুলোকে করেছে বৈচিত্র্যময়। অসমাপ্ত ভালবাসা, অভিশপ্ত প্রেম, ভূতের আংটি গল্পগুলো পাঠে পাঠক পাবেন এক ভিন্ন স্বাদ। বইটির ভূমিকায় কবি শফিকুল ইসলাম লিখেছেনÑ ‘এক অর্থে একটি শেকড় সন্ধানী অভিযান, শিল্প ও সাহিত্য সমীকরণের নতুন মিছিল। তাঁর শৈল্পিক চিন্তা চেতনায় ফুটে উঠেছে গ্রামীণ ও সামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছবি। চিন্তাশক্তির নতুন কলাকৌশল সমৃদ্ধ সময়ের সাহসী উচ্চারণ।
পিতা মরহুম আব্দুল আলী ও মাতা মোছা. চাঁনবানু বেগম। ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি বৃহত্তম সিলেটের হাওর-বাওর খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুন্ডাস্থ দাতিয়া পাড়া গ্রামে ১৯৮৯ সালে ২২ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মপাশা উপজেলার খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ‘মহিষখলা দাখিল মাদ্রাসা’ এবং ‘চট্রগ্রাম ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক কলেজ’ থেকে ‘দাখিল’ ও ‘উচ্চমাধ্যমিক’ পাশ করেন। বন্ধুসুলভ ও মিশুক মনের অধিকারী মাঈন উদ্দিন'র সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার হাতেখড়ি কিশোর বয়সেই। ছোটগল্পে তাঁর দারুণ দখল, পাশাপাশি কবিতাও লেখেন। তরুণ প্রতিভাবান মাঈন উদ্দিন রচিত ‘‘ফৈড়লের নাও’’ এমনি একটি ছোট গল্পের বই এতে মোট এগারোটি মৌলিক গল্প রয়েছে।