কবিতার অন্তরে যে আহত ও ক্ষতবিক্ষত যন্ত্রণার দীর্ঘশ্বাস নিবিড় আবেগে পুঞ্জীভূত ঘনঘোর সৃষ্টি করে, তার উপশমে শব্দবন্ধ কিংবা অক্ষরের বৃত্ত কি কোনো কাজে লাগে? নাকি একাকী বেদনায় সিক্ত একটি হৃদয় অপ্রাপ্তির ভারে কেবলই অতলে নিমজ্জিত হতে থাকে, যা কখনো তাকে অভিভূত নিশ্বাসের জগতে ফিরিয়ে নিতে পারে না? অনন্যা জান্নাত তার কবিতার অতলগহনে অনুরাগী যে আর্তনাদ তুলে ধরেন, তাতে কখনো কখনো আত্মা বিদীর্ণ হয়, কখনো অনিবার্য নিয়তির কাছে পরাজয় মেনেও তিনি বিশ্বাসের স্থবির জগতটাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। তাই অনন্যার কবিতা কখনো আবেগের অশ্রুতে সিক্ত, কখনো হাহাকারের আকুলতায় সমর্পিত। একজন প্রেমিকার জীবনের অপ্রাপ্তির দুর্বহ ভার তাকে যে কতটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে, অনন্যার কবিতার পরতে পরতে তার সাক্ষ্য সহজ-সাবলীলতায় দৃষ্টি ও মনের অগোচর থাকে না। অনন্যার কাব্যভাষ্য এবং তার নির্মাণকলায় আমরা যাকে দেখতে পাই, সে প্রেমপূজারি একজন দয়িতা, অপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তার মধ্যেও যার আকাক্সক্ষার কখনো মৃত্যু হয় না। অনন্যার কাব্যগ্রন্থ ‘নাকফুলে আদিম ঘ্রাণ’ এর প্রতিটি কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে সেই নিষ্কলুষ প্রেমের আকুল আকুতি ব্যক্ত হয়েছে। কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতা পাঠ করতে করতে পাঠককে মিশে যেতে হবে তার অন্তর্গূঢ় আবেদনের মহিমার সঙ্গে। আর এখানেই অনন্যা জান্নাতের কবিতার সার্থকতা।
যশাের শহরে বেড়ে ওঠা কবি অনন্যা জান্নাতের জন্ম ১৯৯৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর। সহজ, সরল, সৎ, স্পষ্টভাষী, সাহসী, প্রতিবাদী ও দৃঢ়চেতা এই কবি, তফসির আহমদ ও নিলুফার ইয়াসমিন দম্পতির বড় সন্তান। ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থী হিসেবে মনে স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্যের বীজ সুপ্তাবস্থায় ছিল। যাপিত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সেই বীজকে উসকে দিয়ে গড়েছে মহীরুহ। তার লেখায় নান্দনিক শব্দ আর মেদহীন উপমার সাথে মিশে আছে হৃদয়ের নিখাদ অনুভূতি। ‘প্রণয়ের আটপৌরে অসুখ সাহিত্যপাড়ায় অনন্যা। জান্নাতের প্রথম নিবেদন। প্রচণ্ড আবেগী জীবনের সাথে প্রণয়ের অমিমাংসিত পরিণয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন। এই কাব্য। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবির বেশকিছু কবিতা। প্রকাশিত হয়েছে তােপধ্বনি' (২০১৯) নামের যৌথকাব্য। হৃদয়ের নির্যাস থেকে বেরিয়ে শব্দমালা সময়ের সাথে। এগিয়ে যাবে সাফল্যের স্বর্ণচূড়ায় সেই প্রত্যাশা রাখি।