ছোটদের জন্যে লেখা মোটেও খুব সহজ কাজ নয়। তার উপর ছোটদের জন্যে ভাল গল্প লেখা আরও কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই করার চেষ্টা করেছেন তরুণ গল্পলেখক সাজিদ মোহন তাঁর এই ‘অধিনায়ক’ নামের গল্পের বইটিতে। তিনি ছোটদের লেখক হিসেবে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এক পরিচিত নাম। এই বইয়ের গল্পগুলোতে তিনি পটভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছেন ছোটদের মন ছুঁয়ে যাওয়া বিষয়। সেই সঙ্গে তিনি ছোটদের মনের ভাষায় গল্পের পাতাগুলো ভরিয়ে তুলেছেন। সেইসঙ্গে গল্পের ভিতর দিয়ে লেখক সেই চিরন্তন বার্তা দিয়েছেন, যা ছোটদের বড় হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। চরিত্ররা সবই ছোটদের খুব কাছ থেকে দেখা প্রতিদিনের বন্ধু। সেই বন্ধুদের যখন গল্পের বইয়ের পাতায় দেখবে তখন তাদের মন ভরে উঠবে বইকী! প্রথম গল্পের নাম ‘অধিনায়ক’। এ গল্পের মতি দলের একজন সাধারণ প্লেয়ার। কিন্তু সে সব সময় মন-প্রাণ দিয়ে দলের হয়ে খেলে। দলকে জেতাতে পারলে, আনন্দে তার সেদিন রাতে চোখে ঘুম আসে না। সেদিন ফাইনাল ম্যাচে দারুণ পারফরম্যান্স করে একাই দলকে জিতিয়ে দিল মতি। বিজয়ীর ট্রোফি নিতে মঞ্চে ডাক পড়ল অধিনায়কের। তখন সকলকে অবাক করে দিয়ে ট্রোফি নিতে মঞ্চে মতিকেই পাঠাল তাদের দলের অধিনায়ক। অধিনায়কের ত্যাগ আর ভালবাসায় সেদিন আনন্দে মুখর হয়ে উঠল মাঠ-ভরতি দর্শক। ‘হেডস্যারের সাইকেল’ গল্পের রাতুল সেদিন দেখল, একজন টিচার আর কয়েকজন ছাত্র মিলে হেডস্যারের সাইকেলটা চুরি করল। তারপর সুযোগ বুঝে রাতুল করল কী, সকলের চোখের আড়ালে ওই সাইকেলটা লুকিয়ে রেখে দিল একটা জায়গায়। পরে সে একদিন হেডস্যারকে সাইকেল চুরির কথাটা বলেও দিল। কিন্তু হেডস্যার সব ঘটনা জানার পরও সাইকেল চুরির বিচার তো করলেনই না বরং কথাটা কাউকে বলতে নিষেধ করে দিলেন। তিনি ভাবলেন, সকলে এ কথা শোনার পর যদি স্কুলের বদনাম হয়ে যায়? বুলবুলি পাখির ঝাঁক চাষের খেতের ফসল খেয়ে নষ্ট করছে দিন-দিন। ‘বুলবুলিতাড়ুয়া’ গল্পের চাষি উপায় ভাবতে ভাবতে একদিন করল কী, তার ছেলেমেয়ের দুটো বাতিল জামা দিয়ে দুটো কাকতাড়ুয়া তৈরি করে একটা খুঁটিতে বেঁধে খেতের মাঝখানে পুঁতে রাখল। পরদিন সকালে আশ্চর্যজনক ভাবে দুটো কাকতাড়ুয়াই সত্যি হয়ে ছাষির ছেলে ও মেয়ের বেশ ধরল। তারপর তার বাবার খেতের ফসল বাঁচাতে বুলবুলি পাখির ঝাঁককে ‘হুই-হুই-হুস’ বলে তাড়াতে লাগল। ছেলেমেয়েরাই চাষির ফসল বাঁচিয়ে দিল। চাষি তো আনন্দে আত্মহারা। গোটা গ্রামের সব লোক ছেলেমেয়ে দু’জনের সুখ্যাতি করতে লাগল। পাশের বাড়ির একটা ছাদে তখন চলছে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ‘সাকরাইন’। ‘ভোঁ-কাট্টা’ গল্পের রাতুলও তাদের বাড়ির ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল। রাতুলের বোনও ছাদে আসতে চেয়েছিল। রাতুল তাকে সঙ্গে নেয়নি। হঠাৎ তার ঘুড়িটা হয়ে গেল ভোঁ-কাট্টা! নীচে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে ঘুড়িটা কোত্থাও খুঁজে পেল না। খুব মন খারাপ হয়ে গেল রাতুলের। বাড়ি ফিরে রাতুল ফের ছাদে উঠে দেখল, তারই ঘুড়িটা কখন উড়তে উড়তে তাদেরই ছাদে এসে পড়েছিল। বোনটা তার ঘুড়িটা কুড়িয়ে পেয়েছে। আনন্দে রাতুল ঘুড়িসুদ্ধ বোনকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, ‘বোনু, আমার আদরের বোনু!’ দূরের একটা লেকে নাকি অনেক মাছ আছে বলে শুনেছিল ‘ফিশিং’ গল্পের সজল। বড় মাছ ধরার তার খুব শখ অনেক দিনের। তাই সে সকলকে নিয়ে গেল সঙ্গে করে বড় মাছ ধরে তাক লাগিয়ে দেবে।একটা গোটা দিন কেটে গেল। একটাও মাছ উঠল না সজলের বঁড়শিতে। পরের দিন একটা লোক পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সজলদের দেখে বলল, ‘তোমাদের মাছ ধরার কায়দাটা ঠিক হচ্ছে না। এসো, তোমাদের মাছ ধরার ঠিক কায়দাটা শিখিয়ে দিই!’ লোকটার কাছে কায়দাটা শিখে সজল সেদিন একটা মস্ত বড় মাছ ধরে ফেলল। আনন্দে বন্ধুদের সকলের সে কী হইচই! তপু ছেলেটাকে খুব পছন্দ করে, যদিও ছেলেটা বখাটে মতো। ‘বখাটে’ গল্পের সেই বখাটে ছেলেটার নানা মজাদার কাণ্ডকারখানা বেশ লাগে তপুর। তপুর আপা বখাটে ছেলেটার নানা অদ্ভুত কাণ্ডের কথা শুনতে শুনতে কখন ছেলেটাকে খুব ভালবেসে ফেলেছে। কিন্তু আপা জানে না, আসলে দু’জনেই তো একটা ছেলে। একদিন আপা আর তপু পথে যেতে যেতে দেখা হয়ে গেল সেই বখাটে ছেলেটার সঙ্গে। তখনই সব বুঝতে পারল আপা। ছোটদের কাছে বইটি আদরণীয় হয়ে উঠবে। রতনতনু ঘাটী কবি ও শিশুসাহিত্যিক সাবেক সহ সম্পাদক আনন্দমেলা, কলকাতা।