”প্রবঞ্চক”বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা: “মেয়েদের বেচে দেবার কথা শুনেছেন কখনাে? হ্যা, তা শুনেছি। মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে পাচারের জন্য মেয়েদের দালালদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ‘পাচার করার উদ্দেশ্য ছাড়াও অন্য আরও একভাবে এদেশে মেয়েদের বেচে দেওয়া হয়। সেখানে কোনাে দালাল লাগে না। নিজের পরিবারই দালাল হয়ে ওঠে। আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না। মেয়েটি একটু ভেবে রইচের চোখের দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বললাে, আমাকে কি আপনার বিশ্বাস হয়? মানে- আমি যা বলবাে, তাই মেনে নেবেন আপনি? রইচ বললাে, 'হ্যা, হয়। আমার কাছে মিথ্যা বলে আপনার তাে কোনাে লাভ নেই। তাছাড়া আমি শুনেছি মৃত্যুপথযাত্রীরা মিথ্যে বলে না।' মিথ্যা আসলেই এক বিভ্রম। কে বলে, কখন বলে, কেন বলে- এর কোনাে ব্যাখ্যা নেই। সে যাক, আপনাকে আমি যা বলবাে আমার কাছে তা-ই সূত্য, আপনি তাকে সত্য-মিথ্যা, যে-কোনাে কিছুই ভাবতে পারেন। রইচ হেসে বলল, 'বাহ! বেশ গুছিয়ে কথা বলেন। তাে দেখছি আপনি। প্রথমবারের মতাে হাসলাে মেয়েটি। এই প্রচণ্ড গরমের হাঁপিয়ে ওঠা দিন শেষে একচিলতে শান্তির পড়ন্ত বিকেলে পদ্মার জল ভেঙে এগিয়ে চলা লঞ্চের বেখেয়ালি হাওয়া রইচকে যতটা না। আন্দোলিত করলাে, তারও অধিক করলাে সেই ম্লান। হাসি । রইচের মনে হলাে, সত্য-মিথ্যার রহস্য ভেদ করে আর যা-ই আসে আসুক, সে মেনে নেবে। কিন্তু এই হাসিভরা মুখটা দূরে চলে যেতে পারে, এমন কারণ অন্তত না আসুক।
মোহাম্মদ তন্ময় সাত্ত্বিক ১৯৯১ সালের ৬ নভেম্বর ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখালেখির সূচনা হয় ১৯৯৯ সালে, যখন তিনি তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। কিন্তু পরিবারে লেখালেখি ছিল তার জন্য নিষিদ্ধ কর্ম। তিনি লুকিয়ে লিখতেন। ২০০৮ সালের ১ নভেম্বর পরিবারের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যোগ দেন ইঞ্জিনিয়ারিং মেকানিক হিসেবে। তখন তিনি কেবল উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন। উদ্দেশ্য জরাজীর্ণ পরিবারের হাল ধরা, আর নিজের লেখালেখির পথটাও সুগম করা। বাস্তবে তিনি পরিবারকে টেনে তুলতে পারলেও, নিজেকে যেনো আরো গভীর গিরিখাদে ফেলে দেন। ডিফেন্সের কঠিন জীবনে তার লেখাপড়া ও লেখালেখি হয়ে পড়ে আরো কঠিন। তবে তিনি নিজেকে পরাজিত হতে দেননি। শত প্রতিকুলতার মাঝেও তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেছেন। স্বপ্নবাজ মানুষটির কল্পনার জগৎ যথেষ্ঠ শক্তিশালী। বাস্তব জীবনের হাসি-কান্না, রোমাঞ্চ বা ট্রাজেডিগুলোকে কল্পনার রঙে রাঙিয়ে আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ গল্প বানাতে তিনি বেশ পটু। পাবনী (২০১২), মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (২০১৫), এবং রাঙা রাখির ডোর (২০১৬)- এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত ৩টি উপন্যাস। দর্শকপ্রিয় নাটক “অবুঝ দিনের গল্প” (২০১৯)-এর রচিয়তা তিনি। "নিশীথ শ্রাবণধারা" তার প্রথম গল্পগ্রন্থ। এছাড়া "বেরসিক জীবন" নামে একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।