তখন ‘চট্রগ্রাম রেলওয়ে’ স্কুলের ছাত্র ছিলাম। পাশেই ছিল রেল জংশন। ট্রেনের আসা যাওয়ার শব্দ কানে নয় শুধু অন্তরেও বেজে উঠত। ট্রেন এলেই মনে হত কারো আপনজন এসেছে। আবার ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে হত কারো আপনজন চলে যাচ্ছে! যাহোক এ ট্রেনেই শেষ বিদায় দিয়েছিলাম কিশোরের ভাল লাগাকে। আবার এ ট্রেনেই দেখা কিছুকাল পরে......। নিজেও সব সময় ট্রেনেই ভ্রমণ করতাম। কারন বাস জার্নি তেমন পছন্দ করতাম না। ষ্টেশনের মায়াবী লাইটের ধাঁধানো আলো আমাকে খুব আকৃষ্ট করতো। মাঝে, মাঝে ইচ্ছে করে কোন একটা গন্তব্যহীন রাতের ট্রেনে উঠে পড়ি। যে ট্রেন শুধু রাতেই চলে। দিনের বেলায় বিরতি দেয়! ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা কিছুক্ষনের জন্য অদৃশ্য মায়ার বলে একে অপরের আপনজন হয়ে উঠে। নিঃস্বার্থ আপনজন। তারপর দূরে বহুদূরে কোথাও চলে যাই। ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে- আকাশের নক্ষত্রদের সাথে নিয়ে চলি। দমকা হাওয়ারা এসে হামলে পড়বে মুখ মণ্ডলে। আকাশের মেঘগুলো আচমকা গুড়ুম গুড়ুম করে উঠবে। পরিশেষে বৃষ্টিরা ঝেঁপে পড়বে। বখাটের মত বৃষ্টির ফোঁটারা ট্রেনের জানালা দিয়ে ভিজিয়ে দিতে চাইবে। পাশের সারিতে হাতের বামে বসা নিলা নামের মেয়েটা আড়চোখে বার বার তাকাবে। ট্রেন যেতে যেতে ভিড়ে যাবে কোন অচেনা মফস্বলের ষ্টেশনে...। যে ষ্টেশনে নেমে দেখা পাওয়া যাবে ঠিক হারিয়ে যাওয়া কোন পুরানো জীবনের প্রতিচ্ছবিগুলো। যে প্রতিচ্ছবিগুলো আধুনিকতার নামে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। হারিয়ে ফেলেছি শিহরণগুলো! নতুবা ‘শেষ রাতের ট্রেনে করে জীবনের দুঃস্মৃতিগুলোকে যদি কোন অচিন ষ্টেশনে পাঠিয়ে দেয়া যেত’! মনে কি পড়ে সেই খড়ের গাঁদায় লুটোপুটি খাওয়া দিনগুলির কথা! পাকা ইটে গাঁথা দালানের আগে সেই নড়বড়ে ভাঙ্গা ঘরের মায়া মমতার কথা? পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসার উৎসাহে এই গল্প বই প্রকাশের প্রয়াস। আশা করি এই বইটি অনেকেরই ভাল লাগবে। লিখে যেতে চাই সে লেখা যা মানুষের মনে কিছুটা হলেও ছাপ ফেলে। এই গল্পের বইটাও আকুল মনের নিরন্তর প্রচেষ্টা। ব্যস্ততম এই যুগে যদি আমার লেখা কোন পাঠকের মনে বিন্দু মাত্র শিহরণ জাগাতে পারে সেটা আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। যদিও বা ফেসবুকের যুগে এ চেষ্টা এখন অনেক কষ্টে পরিণীত হয়ে পড়েছে। তবে ইদানীং তরুণদের পাঠে আগ্রহ দেখে আবার আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমার এই বই যদি কাউকে কিছুক্ষনের জন্য অন্য জগতে হারাতে পারে; তবে আমার সার্থকতা। আমাদের যাদের স্বপ্নের জগতে যাওয়ার সাধ্য নেই একটি গল্প অথবা একটি বই আমাদের সে সাধ পুরন করতে পারে। সবার প্রতি নিখাদ ভালোবাসা রইল। -কাজী সুলতানুল আরেফিন
কাজী সুলতানুল আরেফিন ১৯৮৪ সালের ১৭ই এপ্রিল ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার আওতাধীন পাঠাননগর ইউনিয়ন এর অন্তর্গত ‘পূর্ব শিলুয়া’ গ্রামের ঐতিহ্য বাহী কাজী বাড়িতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। মা, বাবা সহ দুই ভাই ও এক বোনের সংসারে তিনি বড়। লেখা পড়া সম্পন্ন করেছেন চট্রগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ থেকে। শহরের আধুনিকতা ছেড়ে গ্রামের সবুজ সমারোহে মিশে যাওয়া এই লেখকের মন বার বার ছুটে যায় ফেলে আসা চট্রগ্রামে। তবুও লেখকের মতে গ্রামেই প্রশান্তি। লেখকের বেশীরভাগ লেখা মানুষের জীবন থেকে নেয়া! দেশের ১ম সারির জাতীয় দৈনিকগুলোতে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়। লেখকের মোট প্রকাশিত বই ৫ চাঁদের আলো ও দিন-রাত- উপন্যাস (বইঘর প্রকাশনী)২০১৫ইং আগুনি কমল- রম্য উপন্যাস (বইঘর প্রকাশনী)২০১৬ইং কমল ও পরীর দল- রম্য কিশোর উপন্যাস (দাঁড়িকমা)২০১৮ইং মেপে হাসুন চেপে হাসুন- রম্য গল্প- (সাহিত্যদেশ)২০২০ইং শেষ রাতের ট্রেন- গল্পগ্রন্থ- (দাঁড়িকমা প্রকাশনী)২০২১ইং নীল যন্ত্রণার নিলা- উপন্যাস- (প্রজন্ম প্রকাশনী) ২০২২ইং