ব্লাডস্টোন" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ঐতিহাসিক উপন্যাসে ইতিহাসের কোনাে সত্যঘটনা অবলম্বন করে ঔপন্যাসিক তার কল্পনার জাল বিস্তার করে চলেন। কিছু সত্যচরিত্র আর কিছু কাল্পনিক চরিত্রের মিশ্রণে ঐতিহাসিক পটভূমি হয়ে ওঠে অর্থবহ। অর্থাৎ, যেখানে ইতিহাস থেমে যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় ঐতিহাসিক ঔপন্যাসিকের কল্পনার বিচরণ। ইতিহাস আর ঐতিহাসিক উপন্যাস এক নয়। যা ঘটেছে শুধু তারই নির্ভেজাল বর্ণনা-গ্রন্থ হলাে ইতিহাস। প্রমাণ ছাড়া কোনাে তথ্য গ্রহণ করার কিংবা তথ্যের অদল-বদল ঘটানাের সামান্যতম স্বাধীনতাও ইতিহাসবিদের নেই। কিন্তু যা ঘটেছে- ঐতিহাসিক উপন্যাস শুধু তারই ওপর নির্ভর করে লেখা হয় না। যা ঘটেছিল বা ঘটতে পারত বলে অনুমান করা যায়- তাকেও উপন্যাস সমমর্যাদায় গ্রহণ করে। ফলে ইতিহাসের সত্য যেখানে শুধু ঘটনার সত্য, উপন্যাসের সত্য সেখানে ঘটনার সত্যের সঙ্গে ঔপন্যাসিকের বােধ, কল্পনা ও হৃদয়ের সত্যের এক সমন্বিত রূপ। তাই বলা চলে, ইতিহাস শিক্ষা দেয়া ঐতিহাসিক উপন্যাসের উদ্দেশ্য নয়। কেউ যদি ইতিহাস শেখার আশায় ঐতিহাসিক উপন্যাস পড়েন, তাহলে তিনি ভুল করবেন। অবশ্য “ব্লাডস্টোন”কে পুরােপুরি অর্থে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায় কিনা তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্ত। উপন্যাসের মূল পটভূমি বর্তমানের বাংলাদেশ, যেখানে ঘটনার সূত্র ধরে উঠে এসেছে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি। ইতিহাস তুলে আনতে গিয়ে আমি যতটা সম্ভব সত্যের একদম কাছ ঘেঁষে গিয়েছি। প্রাচীন মেসােপটেমিয়া সভ্যতার প্রয়ােজনীয় তথ্যের জন্য বিদেশী রাইটারদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ও আর্টিকেল পড়তে হয়েছে আমাকে। কোনাে কিছুই হুবহু ইতিহাস থেকে নেওয়া নয়। আমার কল্পনার দৃষ্টিতে দেখা দৃশ্যগুলােই বর্ণনার মাধ্যমে বাস্তব রূপ দিতে চেষ্টা করেছি। তবে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেল ও তাওরাত থেকে নেওয়া তথ্যগুলাে সম্পূর্ণ অবিকৃতভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলার বারাে ভূঁইয়াদের সময়কার অধ্যায়গুলাের কিছু আছে ইতিহাসের নির্মম সত্য আর কিছু আছে কল্পনা। তবে এর পুরােটা আমার একার কল্পনা নয়। বেশ কিছু দৃশ্য-কল্প আঁকার জন্য আমাকে নির্ভর করতে হয়েছে ইসমাইল হােসেন সিরাজীর “রায়নন্দিনী” উপন্যাসের উপর। মাহতাব খান’ আর ‘অরুণাবতী' ছিলাে রায়নন্দিনী উপন্যাসের খুব ক্ষুদ্র অংশ। কিন্তু এরাই ব্লাডস্টোনে অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আর পাঠকদের অনুরােধ করব যেন উপন্যাসটি পড়ার পর রাজা প্রতাপাদিত্যকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু না করেন। উপন্যাসের খলচরিত্রের প্রয়ােজনে রাজা প্রতাপের চরিত্রের মন্দ দিকগুলাে তুলে এনেছি। কিন্তু এই রাজা যে বাংলাকে ভালবেসে বাংলার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আজীবন লড়ে গেছেন, তা উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়নি। অনান্য ঐতিহাসিক ঘটনাগুলাের বর্ণনা দিতে গিয়ে আমি যতটা সম্ভব সত্যের কাছাকাছিই থাকার চেষ্টা করেছি। ব্রিটিশ আমলের যে ইতিহাস উঠে এসেছে, তার প্রায় সবটুকুই সত্য। অ্যালেক্সান্ডার দি গ্রেটের মৃত্যুকালীন দিনগুলির কিছু অংশ তার প্রধান সেনাপতি টলেমীর জবানবন্দী থেকে নেয়া। কিংবদন্তী পাগানিনি সম্পর্কে এই উপন্যাসে যা কিছু জানবেন তা পাগানিনির শিষ্যরা বলে গেছেন। মাদার তেরেসার বিশেষ মিটিং সম্পর্কিত তথ্য ফ্রান্সিস বালা নামে এক মিশনারি কর্মীর ডায়েরি থেকে লব্ধ। সম্রাট সাইরাসের সাথে নাবােনিডাসের ব্যাটেল অফ অপিস, মুঘল বাদশা হুমায়ূনের দিল্লির সিংহাসন থেকে বিতাড়িত হওয়া এবং ক্ষমতা পুনর্দখল, অ্যালেক্সান্ডারের কাবুল-কান্দাহার দখলের পর পাঞ্জাব পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে আবার ফিরে চলা এবং প্রাচীন সময়কার ভৌগলিক বর্ণনার জন্য ইন্টারনেটের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এই জন্য গুগুল মামাকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে প্রকাশিত হচ্ছে আমার দ্বিতীয় থ্রিলার উপন্যাস “ব্লাডস্টোন”। প্রথম উপন্যাস “ইনকারনেশন” আপনাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পেরেছিল তা জানি না। কিন্তু পাঠকের কাছ থেকে আমি প্রত্যাশিত ভালবাসা পেয়েছি। আশা করি ব্লাডস্টোনে আপনাদের প্রত্যাশার সম্পূর্ণ প্রাপ্তি ঘটবে।
Nazim Ud Daula-er জন্ম ১৯৯০ সালের ৪ নভেম্বর নানাবাড়ি কেরানীগঞ্জে। পৈত্রিক নিবাস যশোর জেলায় হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকার আলো বাতাসের মাঝে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করে বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি “অ্যানালাইজেন”-এ কর্মরত আছেন। লেখালেখির চর্চা অনেক দিনের। দীর্ঘসময় ধরে লিখছেন ব্লগ, ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে। ২০১২ সালে প্রথম গল্প “কবি” প্রকাশিত হয় কালান্তর সাহিত্য সাময়িকীতে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম থ্রিলার উপন্যাস “ইনকারনেশন”। একই বছর আগস্টে প্রকাশিত হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার “ব্লাডস্টোন” তাকে এনে দেয় বিপুল পাঠকপ্রিয়তা। এ পর্যন্ত ৬টি থ্রিলার উপন্যাস ও ১টি গল্পগ্রন্থ লিখেছেন তিনি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লেখায় মনোনিবেশ করেছেন। কাজী আনোয়ার হোসেনের কালজয়ী চরিত্র “মাসুদরানা” নিয়ে নির্মিতব্য চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। এছাড়াও “শান”, “অপারেশন সুন্দরবন” সহ বেশ কিছু বড় বাজেটের বাংলা চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। অবসর সময় কাটে বইপড়ে, মুভি দেখে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে। সদালাপী, হাসি খুশি আর মিশুক স্বভাবের এই মানুষটি স্বপ্ন দেখেন একটি সুন্দর বাংলাদেশের, যেখানে প্রত্যেকটি এক হয়ে মানুষ দেশ গড়ার কাজে মন দেবে।