"সেদিন গেছে ভেসে" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: আশির দশকের তিন যুবক যুবতী। শামস, হাফিজ আর সানজিদা। তিন বন্ধু ওরা। আপাদমস্তক আধুনিক, সময়ের চেয়ে অনেকটা এগিয়ে। ওদের বন্ধুরা মেধা আর ব্যক্তিত্বের দৌড়ে পাত্তা পায় না এই তিনজনের কাছে। তারাও নিজেদের জগত নিয়েই বিভাের হয়ে থাকে। আসে প্রেম, আসে ঈর্ষা...আর অবধারিতভাবে পায়ে পায়েই আসে ভাঙনও। ভেঙে যায় তিনজনের নিটোল বন্ধুত্ব। সময়ের অমােঘ নিয়মে বয়স বাড়ে তিন বন্ধুর। একসময় ওরা ছিটকে পড়ে জীবন আর জীবিকার খোঁজে। তবু কীসের এক অদৃশ্য সুতাে ওদেরকে আলতাে টানে বেঁধে রাখে। সেই অদৃশ্য সুতাের হ্যাঁচকা টানেই আবার দেখা হয়ে যায়। তিনজনের। একেবারে অপ্রত্যাশিত এক যােগবন্ধনে। শামসের মেয়ের সাথে হাফিজের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে। সানজিদাও উপস্থিত সেখানে। কারণ তিন বন্ধুই আর এক জীবনে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। কিন্তু সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে ঘটে যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুর্যোগ। পাত্র বিয়ের আসরেই বিষক্রিয়াতে লুটিয়ে পড়ে মৃত্যুর কোলে। ভেঙে যায় মিলনমেলা। আবার বাজতে থাকে ভাঙনের সুর। বিয়ের আসরেই বরকে হারিয়ে কনে প্ৰমার জীবন মুখ থুবড়ে পড়ে। সেই সময়েই অপরিচিত এক বন্ধু বাড়িয়ে দেয় সহমর্মিতার হাত। তার বাড়িয়ে দেওয়া হাতে কোনাে কার্পণ্য থাকে না। তবু কী এক রহস্যের আড়ালে সে মুখ লুকাতে চায়। সেই রহস্যটাকে উপড়াতে পারলেই বুঝি জীবনের কোলাহলে মেতে ওঠা যাবে। যেই দিন হারিয়ে গেছে, সেই দিনটাকে চিরতরে ভাসিয়ে দেওয়া যাবে। বর্তমানের রূপ রস গন্ধ ভরা ভরপুর পাত্রে অতীতের সেই শূন্য পাত্রের আর প্রয়ােজন কীসে?
লেখালেখির সাথে গাঁটছড়া বাঁধার গল্পটা এখন পুরনো। অথচ এই সেদিনও নিজেকে পাঠক ছাড়া আর অন্যকিছুই ভাবা হয়নি। নিজেকে এখনও একজন ভালো পাঠক ভাবতে ভালো লাগে। ভালো বইয়ের সাথে সময় কাটানোর চেয়ে আনন্দদায়ক কাজ আর কিছুতেই নেই। বাবার বদলির চাকরির সুবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছেলেবেলা কেটেছে। তাই প্রকৃতির সাথে ভালোবাসাবাসির গল্পটাও অনেক পুরনো। মানুষের মন, মনস্তত্ত্ব আর বৈচিত্র্যময় জীবনবোধের সাথে মিশে গেছে এই প্রকৃতিপ্রেম। এসবই চুপিসারে কখন যেন লেখালেখিতে উঠে এসেছে।