মাআল আইম্মাহ। বাংলায় বললে, চার ইমামের সাথে। আমরা অনেকে চার ইমাম বলতে চারটি মতাদর্শ বুঝি। মনে করি, চার ইমাম চার দলের প্রবর্তক। প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতের ওপর অবিচল। সত্যিই কি তাই? আমাদের মহান ইমামগণ কি এই উদ্দেশ্যেই ফিকহ চর্চা শুরু করেছিলেন? উম্মতকে নানান দলে বিভক্ত করার উদ্দেশ্যে?
আসলে উম্মাহ যে ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী এবং ইমাম আহমাদ (রহ.)-গণের ব্যাপারে একমত হয়েছে, এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। আবার তাদেরকে কেন্দ্র করে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের সংখ্যাও ইতিহাসে নেহায়েত কম নয়। এজন্য ইলমে-দ্বীন চর্চাকারী মাত্রই আমাদের সবার দায়িত্ব মহান ইমামগণের জীবন-কর্ম জানা। তাদের রেখে যাওয়া খেদমত, অনুসৃত মূলনীতি, তাদের জীবনাদর্শ, আদব আখলাকের মাঝে আমাদের জন্য যে অকৃত্রিম শিক্ষা রয়েছে, সকলের জন্য অনুসরণীয়। এই বিষয়ে চমৎকার একটি বই ড. সালমান আল আওদাহ (হাফি.) রচিত 'মাআল আইম্মাহ'। এতে চার ইমামের জন্ম মৃত্যু থেকে শুরু করে তাদের কর্মপন্থা, জীবনের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকা আমাদের জন্য অনুপম শিক্ষা এবং মণিমুক্তাগুলো একত্র করা হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াফি পাবলিকেশন থেকে 'ইসলামের চার নক্ষত্র: চার ইমাম' নামে বইটি আজ প্রকাশিত হলো। চার ইমামের জীবনাদর্শের ওপর সম্ভবত এই প্রথম এমন একটি গবেষণা-ধর্মী বই প্রকাশিত হলো, যেখানে তাদের জীবন কর্মের পাশাপাশি তাদেরকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিভিন্ন মিথ্যাচার-অভিযোগ-আপত্তির খণ্ডন করা হয়েছে।
সালমান বিন ফাহদ বিন আব্দুল্লাহ আল আওদা (জন্ম: ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৬) আবু মু'আদ নামে পরিচিত। তিনি একজন সৌদি আলেম এবং মুসলিম স্কলার। তিনি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স’ এর একজন সদস্য এবং ইসলাম টুডে ওয়েবসাইটের আরবি সংস্করণের পরিচালক। বেশ কয়েকটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং পত্রিকায় কলামলেখক হিসেবেও কাজ করেন। সৌদি আরবের আল-কাসিমের বুরাইদা শহরের নিকটবর্তী আল-বাসর শহরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি তার শৈশব আল-বাসরে অতিবাহিত করেছেন, তারপরে বুরাইদাতে চলে আসেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আল-আউদার পুত্র হিশাম এবং তার স্ত্রী হায়া মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষাজীবনে তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সা'দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক আইন শাসনে বিএ, এমএ এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং আবদুল আল-আজিজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে বাজ, মুহাম্মদ ইবনে আল উসাইমিন, আবদুল্লাহ আবদাল রহমান জিবরিনের মতো পণ্ডিতদের কাছে থেকে শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে আল-কাসিমের বৈজ্ঞানিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষক হন। ১৯৯০ সালে বুরাইদার কেন্দ্রীয় মসজিদেও সাপ্তাহিক পাঠদান শুরু করেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রায় ৫০টি বই রচনা করেন।