শেফালি বেগম ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি সে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতা অসংখ্য মেয়ের যন্ত্রণা, নিগ্রহ ও ক্ষোভের প্রতিভূ হয়ে উঠবে। ঘটনাচক্রে তাকে যখন তা-ই হতে হলো, সে যত না বিস্মিত হলো, বিপদগ্রস্ত বোধ করল অনেক বেশি। পিতৃপরিচয়হীন সন্তানকে নিয়ে পথ চলতে গিয়ে লাঞ্ছনা-গঞ্জনায় পরিত্রাণহীন জীবন তাকে বাধ্য করল কোথাও থিতু না হয়ে পালিয়ে বেড়াতে। কিন্তু তার ভাষায় ‘এট্টুন দ্যাশ, কই যাই’ এ-ই যেন তাকে তার নিয়তিকে চিনিয়ে দিল। সে নিরুদ্দিষ্ট হলো। রেখে গেল তার শিশুসন্তানকে, আর সন্তানের কাঁধে তারই পলায়নপর জীবন। সেই শিশুসন্তান বড় হয়ে অবাক হয়ে লক্ষ করল সে তার মায়ের পদচ্ছাপেই পা ফেলে চলেছে। তার মা পালাত তাকে নিয়ে, সে পালাচ্ছে তার সন্তানকে নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধে প্রাপ্তি হিসাবে বিজয়টা অবশ্যই মহান গৌরবের, তবে মুক্তিযুদ্ধ যে এক অপ্রাপ্তি ও অবিজয়েরও বয়ান, শেফালি বেগম তা দেখে দেখে অপমানে-গ্লানিতে-দুর্ভোগে দিশেহারা হয়ে যা ভেবেছে তা কি তার নিজস্ব, ভ্রান্ত উপলব্ধি? এর জবাব খুঁজতে পাঠককে কিছু প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের এতকাল পরেও যেসবের মুখোমুখি হতে নানা এজেন্ডাশাসিত রাজনীতি ও দেশপ্রেমের ঘোলা আয়না বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
জন্ম : ৩১ অক্টোবর, ১৯৫৪ সিলেট শহরের নাইওরপুলে। স্কুলের পাঠ বৃহত্তর সিলেটের নানা জায়গায়। পরবর্তী শিক্ষাজীবন ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কবিতা দিয়ে লেখালেখির শুরু। ছাত্রাবস্থায় প্রকাশিত কবিতাসংকলন ‘শবযাত্রী স্বজন’। কথাসাহিত্যে, বিশেষত গল্পে, মনোনিবেশ আশির দশকে। প্রথম গল্প সংকলন ‘ছায়াদণ্ডি ও অন্যান্য’ (১৯৯২)। পুস্তকাকারে প্রথম উপন্যাস ‘মেঘপাহাড়’ (২০০০)। সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বিদেশে কূটনীতিকের দায়িত্ব পালনসহ কাজ করেছেন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নানা অঙ্গনে। বর্তমানে একটি ইংরেজি দৈনিকে সম্পাদকীয় বিভাগে কর্মরত। লেখালেখির স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ দেশের প্রায় সব প্রধান সাহিত্যপুরস্কার। তাঁর গল্প ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও আরবি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।