জীবনানন্দ দাশের নায়িকা রাধিকা সন্যালের কথা তখন আমার মনে পড়ে যায়। রাধিকার পাখা ছিল না অথচ অঘ্রানের ভেজা কুয়াশায় শঙ্খচিল হয়ে সে উড়ত। আমার মাথার মধ্যে রাধিকা সন্যাল ঢুকে গেল। ঘোরের ভেতরে ঢুকে আমি কবিতা লিখতে শুরু করলাম, নতুন ধরনের কবিতা। প্রথমত, আমার মনে হলো, কবিতা তো গোরুর রচনা নয় যে তার শিরোনাম থাকবে। কবিতার প্রাণকেন্দ্রে থাকে ভাব—রসের বীজ—বাক্য, যেখানে গানের ধ্রুবপদের মতো কবিতা ঘুরে ঘুরে আসে। কবিতার শেষে তৃতীয় বন্ধনীর ভেতরে বীজ—বাক্যটি লিখলাম, যেখানে গোটা কবিতাটির প্রাণভোমরা আছে। দ্বিতীয়ত, ভাবের দাবিতে চিত্রকল্পগুলো ব্লার বাড়িয়ে এঁকেছি পরাবাস্তব ছবির মতো করে। বাক্যগুলো ছোটো ছোটো, সহজ কিন্তু সরল নয়। মন্ত্রের মতো রহস্যময় বাক্যগুলোর অর্থ—উদ্ধারের জন্য আলো—অঁাধারি গোলকধাঁধার ভেতর দিয়ে বিস্তর ঘুর—পথে যেতে হবে। তৃতীয়ত, কবিতাগুলো সরাসরি মূলভাষায় লিখলেও অনুবাদকমূলক ভাষার মতো সম্ভ্রমাত্মক একটি দূরত্ব সৃষ্টি করতে চেয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, মূলভাষায় লেখা কবিতা হচ্ছে composition আর অনুবাদ—কবিতায় সেটি imposition হয়ে যায়। চতুর্থত, পঙ্ক্তিতে ক্রিয়াপদ আগে সরিয়ে এনে কাব্যসৃষ্টির প্রয়াসকে আমার কাছে গদ্য কবিতার জন্য যথেষ্ট পৌরুষদীপ্ত মনে না—হওয়ার কারণে ক্রিয়াপদগুলো গদ্য—বাক্যের রীতি অনুযায়ী পেছনে যথাস্থানে সরিয়ে নিয়েছি। আমার মনে হয়েছে, একুশ শতকের দ্বিতীয় দশক কাব্যের নয়, কবিতার। কবিতায় সচেতনভাবে আমি লেখার তারিখ ব্যবহার করে থাকি। এই বইয়ে কবিতার শেষে তারিখ সংযুক্ত হলো না। রাধিকা সন্যালের কবিতাগুলো ৩ নভেম্বর ২০২০ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে লেখা হয়েছে।
উপল তালুকদার-এর জন্ম ২ আগস্ট ১৯৬৮; ফরিদপুর, বাংলাদেশে। মননশীল এবং সৃজনশীল-সাহিত্যের দুটি শাখাতেই তাঁর দীপ্ত পদচারণা ঘটেছে। তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থাদির ভেতরে রয়েছে- গবেষণাগ্রন্থ : বাংলা কবিতার কালান্তর (মম প্রকাশ : ২০০৪), শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যপাঠ ও জিজ্ঞাসা (মাওলা ব্রাদার্স : ২০০৯), মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাসাহিত্যে ফ্রয়েডীয় প্রভাব (অনার্য ২০১৮); প্রবন্ধগ্রন্থ : সাহিত্য ও রাজনীতির বিবিধ প্রসঙ্গ (মম প্রকাশ : ২০০৪); সম্পাদিত গ্রন্থ : বড় চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন (বুকস ফেয়ার ২০১১); কবিতার বই : আকাশ মাটির প্রেমকাব্য (পিলু প্রকাশন : ১৯৯৬), হে মিথ্যা হে সুন্দর (আগামী প্রকাশনী : ২০০৪), জে জে আইলা তে তে গেলা (বুকস ফেয়ার : ২০১২), তােমাকে পাইনি বলে অন্যান্যদের কাছে গিয়েছিলাম (ইচ্ছে প্রকাশ : ২০১৮); কাব্য-সংকলনগ্রন্থ : কাব্যসমগ্র (আগামী প্রকাশনী : ২০০৪), নির্বাচিত কবিতা (ঢাকা প্রকাশনী : ২০০৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা (মম প্রকাশ : ২০১২), এসেছিলে তবু আসাে নাই (ইচ্ছে প্রকাশ : ২০১৭); উপন্যাস : প্রথম কদম ফুল (আগামী প্রকাশনী : ২০০৪), প্রজাপতি অথবা কাকদের গল্প (অনার্য : ২০১৮); ছােটগল্প-গ্রন্থ : চারটি বাহুর ত্রিভুজ (ইচ্ছে প্রকাশ : ২০১৮); শিশুসাহিত্য : ভালাে দৈত্য (ইতি প্রকাশন : ২০১১)। পেশাগত জীবনে ড, উপল তালুকদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে সহযােগী অধ্যাপক পদে কর্মরত।