বীরদের জীবন মানেই হল চেতনা, সাধনা ও সংগ্রামের উপখ্যান। যুগে যুগে যত পরবির্তন এসেছে তা বীরগণই নিয়ে এসেছেন। তাদের চেতনা অন্যরা উজ্জীবিত হয়েছে। দীর্ঘ সাধনা করেছে। সংগ্রাম করে দুর্বলের পতন ঘটিয়েছে এবং যোগ্য ও স্ববলকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ইতিহাসের মহাবীরগণ এভাবেই তাদের চেতনা, সাধনা ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গৌরবময় ইতিহাসের অংশ হিসাবে আজও আমাদের মাঝে অমর হয়ে আছেন। পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে থাকা একজনের বীরের কথা আজ আপনাদের বলব। যার চেতনায় জাগ্রত হয়েছিল তুর্কি জাতি, যার আহবানে সারা দিয়েছিল আনাতোলিয়ার অধিবাসীগণ, যার বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিদীপ্ত নীতিকে সকলেই স্বীকার করেছে, যার বীরত্বের কারণে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য সর্বদা প্রকম্পিত থাকত, যার কারণে খ্রিস্টান ক্রসেডাররা স্বাধীন বিচারণ করতে ভয় করত, যার উপস্থিতি জানতে পারলে নাইট টেম্পলাররা পালায়ন করত, যার চেতনা ও সংগ্রাম উছমানি সাম্রাজ্যের ভিত্তি গড়ে ছিল, যার কারণে সামগ্র বিশ্বের মুসলিম একই পতাকাতলে একতিত্র হয়েছিল ... কে তিনি? কি তার পরিচয়? জানতে ইচ্ছে করছে অবশ্যই! তিনি হলেন ইতিহাসের মহাবীর আরতুগরুল! আরতুগরুল ইবনে সুলাইমান শাহ! মহাবীর উছমানের পিতা ও ওরহান গাযির দাদা আরতুগরুল গাযি! মহাবীর আরতুগরুল গাযি তার পুরো জীবনটা খোদার রাহে ও তারই কালিমা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উৎসর্গ করেছেন। নিজ যোদ্ধাদের সর্বদা তিনি স্মরণ করিয়ে দিতেন, ‘আমরা জিহাদ-সংগ্রাম করব আল্লাহ তাআলার জন্য এবং তিনিই আমাদের বিজয় এনে দিবেন’। সেই আরতুগরুল গাযি ইবনে সুলাইমান শাহকে একটু আলাদাভাবে জানা, তার সংগ্রামী জবীনকে উপলব্ধি করা এবং বিশ্ব জয়ের চেতনা ধারণ করার জন্য ‘ইতিহাসের মহাবীর আরতুগরুল : গোত্র থেকে সাম্রাজ্যের উত্থান’ বইটি পড়া একান্ত প্রয়োজন। ত্রয়দশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময় মধ্যপ্রাচ্য সহ মুসলিম শাসিত অঞ্চলগুলোতে চলছিল নানা সংকট ও বিপর্যয়। বাগদাদে ছিল আব্বাসি সাম্রাজ্য, শাম ফিলিস্তিনে ছিল আইয়ুবি শাসন, মিশর ও হিজাযে ছিল মামলুক শাসন এবং আনাতোলিয়াতে চলছিল সালজুক সাম্রাজ্যের শাসন। কিন্তু কোথাও কোন সমন্বয় ছিল না। এই সুযোগটি গ্রহণ করেছিল কুফরি শক্তি। খ্রিস্টান বিশ্বের ক্রসেড শক্তি বারবার হামলা করছিল মুসলিমদের বাইতুল মুকাদ্দাস দখল নিতে। মুসলিম শাসকদের প্রসাদগুলোতে খ্রিস্টান গুপ্তচররা বাসা বেদে ছিল। মুসলিমদের যে কোন পরিকল্পনা ও সামরিক নীতি অতি সহজেই অমুসলিমদের কাছে পৌঁছে যেত। কোন কিছুই আর গোপন থাকত না। নাইট টেম্পলার নামের একটি স্বস্ত্রবাহিনী সর্বদা মুসলিমদের আমির, শাসক ও জ্ঞানী-গুণীদের তারা গুপ্তহত্যা করত। নারী-অর্থ দিয়ে মুসলিমদের কাবু করে নেতৃত্বের অযোগ্য করে রাখত। অন্য দিকে বর্বর মঙ্গোল জাতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল এশিয়ার পুরো এলাকা। একের পর এক মুসলিম এলাকা তাদের হাতে পদানত হতে থাকে। যেখানেই মঙ্গোলরা উপস্থিত হয়েছে সেখানেই চালিয়েছে নিশংস হত্যা, লন্ঠুন ও নারী-শিশুদের উপর নির্যাতন। এখানেই শেষ নয়, তারা মুসলিমদের জ্ঞান-ভাণ্ডার ও গবেষণাগারগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেছে। মুসলিম জাতিরে এই করুন মুহূর্তে কোন ত্রাণ কর্তার দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। মুহাম্মাদ ইবনে কাসিম, মুসা ইবনে নুসাইর, মুসলিম ইবনে কুতাইবাহ, তারিক ইবনে যিয়াদ ও সালাহুদ্দিন আইয়ুবি রহ.-এর মত কেউ আর এগিয়ে আসছিল না। কিন্তু সবাই অপেক্ষা করছিলেন, এমন কেউ আগমন করুক এবং এগিয়ে আসুক মুসলিম উম্মাকে রক্ষার জন্য। তুর্কিদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা সেই ত্রাণকর্তাকে পাঠালেন। তিনিই হলেন সেই মহাবীর ও ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনাকারী আরতুগরুল ইবনে সুলাইমান শাহ রহ.। বইয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও অধ্যায় এবং পরিচ্ছেদগুলোর শিরোনাম প্রথম অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ তুর্কি গোত্র-বংশ পরিচিতি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ গুয বা উগুয গোত্রের শাখা-উপশাখা তৃতীয় পরিচ্ছেদ রাজনৈতিক দর্শন দ্বিতীয় অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ আরতুগরুল গাযির পিতা সুলাইমান শাহ দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ মহাবীর আরতুগরুল গাযির জীবন বৃত্তান্ত তৃতীয় পরিচ্ছেদ মহাবীর আরতুগরুল গাযির সংগ্রামী জীবন তৃতীয় অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ মহাবীর আরতুগরুল গাযির সন্তানদের পরিচয় দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ স্বতন্ত্র দেশের সন্ধানে যাত্রা তৃতীয় পরিচ্ছেদ তুর্কি গোত্রসমূহের পরিচিতি চতুর্থ অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ সালজুক সাম্রাজ্যের ইতিহাস দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সুলতান আলাউদ্দিন কিকোবাদ প্রথম তৃতীয় পরিচ্ছেদ আব্বাসি সাম্রাজ্যের পতন পঞ্চম অধ্যায় প্রথম পরিচ্ছেদ বাইজেন্টাইন ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ মঙ্গোল হামল ও দখলদারিত্ব তৃতীয় পরিচ্ছেদ আরতুগরুল গাযির মৃত্যু ও উছমান গাযির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সম্পুরক পরিশিষ্ট পরিশিষ্ট-০১ বর্তমান আরতুগরুলের পরিচয় পরিশিষ্ট-০২ উছমানি সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন পরিশিষ্ট-০৩ মানচিত্র, ছবি ও টেবিল ইত্যাদির সংযুক্তি মানচিত্র ও ছবি সংযুক্তির কৈফিয়ত প্রয়োজনীয়তা ও সতর্কতা ইসলামি শাসনামলের বিভিন্ন অঞ্চলের মানচিত্র বইয়ের শুরুতে অনুবাদক ও বিশ্লেষক আবুল ওয়াফা শামসুদ্দিন আযহারী হাফিজাহুল্লাহ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রয়েছে। ভ‚মিকার শিরোনামগুলো নিম্নরূপ ইতিহাস ও ইতিহাসের মহাবীর প্রকৃত ইসলামি ইতিহাস চর্চায় প্রতিবন্ধকতাসমূহ ০১. সংশ্লিষ্ট ভাষা না জানা ০২. ধর্মীয় মতাদর্শের প্রতিবন্ধকতা ০৩. সমাকালীন ও স্থানীয় ইতিহাসবিদদের তথ্য পরিহার ০৪. বিভ্রান্তীকর ইতিহাস চর্চা ০৫. বিরোধী পক্ষ কেন ইতিহাস ও ইতিহাসের ব্যক্তি নিয়ে চর্চা? হাদিসের পর্যালোচনা ও শিক্ষা ইসলামি ইতিহাস অধ্যয়ন ইতিহাসের মহাবীর আরতুগরুল