"থিংক এন্ড গ্রো রিচ" বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ এ বইতে সেই সিক্রেট যা গােপনীয়তার কথা রয়েছে যেখানে সহস্রাধিক মানুষের প্রাকর্টিক্যাল টেস্ট গ্রহণ করা হয়েছে, জীবনের প্রতিটি দিক ছুঁয়ে দেখা হয়েছে। এটি ছিল মি. কার্নেগির আইডিয়া, সেই ম্যাজিক ফর্মূলা যা তাকে অপরিসীম ধনসম্পদ দিয়েছে, তিনি সেইসব লােকের কাছাকাছি গেছেন যাদের অনুসন্ধান করার সময় নেই যে লােকে কীভাবে অর্থ বানায়, এবং তার আশা ছিল আমি ফর্মুলাটি নারী-পুরুষের অভিজ্ঞতা দ্বারা পরীক্ষা করতে সক্ষম হবাে। এ ফর্মুলার গভীরতা বা সম্পূর্ণতা হাতে কলমে দেখিয়ে দিতে পারব। কার্নেগি সাহেব বিশ্বাস করেছিলেন ফর্মুলাটি সকল পাবলিক স্কুল এবং কলেজে শেখানাে উচিত এবং তাঁর মতে, এটি সঠিকভাবে শেখানাে হলে গােটা শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি বিপ্লব ঘটে যাবে এবং স্কুলে যে সময় অতিভাহিত করা হয় তারচেয়ে অর্ধেক সময় ব্যয় করলেই চলবে। এ বইতে বিশ্বাস নিয়ে যে অধ্যায়টি আছে তাতে আপনি পাঠ করবেন বিখ্যাত ইউনাইটেড স্টেটস স্টিল কর্পোরেশন এর আশ্চর্য কাহিনী। মি. কার্নেগির ফর্মুলা অনুসরণ করেই প্রতিষ্ঠানটি দানবীয় রূপ ধারণ করে। এক তরুণ তাঁর এ ফর্মুলায় বিশ্বাস করেছিলেন। তাঁর নাম চার্লস এম. শােয়াব। কার্নেগির ফর্মুলা অনুসরণ করে তিনি বিশাল ধনসম্পদের মালিক হন এবং তার সম্পত্তির মূল্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
আমেরিকায় জন্মগ্রহণ করা অলিভার নেপোলিয়ন হিল আত্মোন্নয়নধর্মী রচনা লেখকদের মাঝে প্রথমদিককার একজন। ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও সফলতা লাভের বিভিন্ন দিক লেখনীতে তুলে এনে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সফল আত্মোন্নয়নমূলক লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে হিলের। নেপোলিয়ন হিলের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের সাউথইস্ট ভার্জিনিয়ায় ২৬ অক্টোবর, ১৮৮৩ সালে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শেষ পর্যন্ত ল'স্কুলের পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। এর আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সাথে, সেই ১৩ বছর বয়স থেকে। ১৯০৮ সালে এন্ড্রু কার্নেগীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে হিলের জীবনে আসে বিশাল পালাবদল। তখনকার সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি কার্নেগী তাকে পরামর্শ দেন ধনী ও সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে ও তাদের সাফল্যের সূত্র সম্পর্কে জানতে। এরপর তিনি বিশ্ববিখ্যাত সফল ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু করেন। এই তালিকায় আছেন হেনরি ফোর্ড, আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলসহ আরো অনেকে। এমন ৪৫টি সাক্ষাৎকারের লব্ধ অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম রচনা 'দ্য ল অব সাকসেস'। এই বইয়ে তিনি সাফল্যের সূত্রকে ব্যখ্যা করেছেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, পুঁজিবাদের সমন্বয়ে মূর্ত দর্শন দিয়ে। নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ সাফল্যগাঁথার চেয়ে সাফল্যের পেছনের সূত্র সহজীকরণের পাথেয় হিসেবে অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিখ্যাত এই লেখকের চরিত্রের কিছু রহস্যময় বৈশিষ্ট্য মানুষকে ভাবিয়েছেও বটে। তিনি দাবি করতেন, আত্মাদের সাথে তাঁর যোগাযোগ আছে, তাঁকে দেয় আধ্যাত্মিক জ্ঞান, সাফল্যের মন্ত্র। হিল এই বিষয়টি তাঁর ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বই 'গ্রো রিচ(!) উইথ পিস অব মাইন্ড' এ খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করেছেন। বর্তমানে তাঁর জীবনের অজানা কিছু অধ্যায় উঠে এসেছে গবেষকদের চোখে। তবে নেপোলিয়ন হিল এর বই সমগ্র বিতর্কিত ব্যক্তিজীবনের প্রভাবেও জনপ্রিয়তা হারায়নি। তাঁর রচিত 'থিংক এন্ড গ্রো রিচ' সর্বকালের সেরা আত্মোন্নয়নমূলক দশটি বই এর তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নেপোলিয়ন হিল এর বই সমূহ হলো 'অ্যাটিটিউড মেন্টাল পজিটিভা', 'দ্য মাস্টার কি টু রিচেস', 'সাকসেস হ্যাবিটস' ইত্যাদি। বিতর্কিত চরিত্রের এই লেখক ১৯৭০ সালের ৮ নভেম্বর বেশ রহস্যজনকভাবে মারা যান। ধারণা করা হয়, তিনি পারকিনসন্স সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন।