"আরশিনগর"বইটির ভূমিকা: ‘আরশিনগর' প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায়। তার আগেই আমার আরাে কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারপরও এই বইটিকেই আমি আমার প্রথম উপন্যাস বলি। এর কারণও রয়েছে। আমার কেন যেন মনে হয়, এই উপন্যাসটি লিখতে গিয়েই আমি প্রথম আমার চারপাশের চেনা জীবন ও জগৎ কে অন্যরকম এক সংবেদনশীলতায় অনুভব করি, অনুবাদ করি নিজের ভাবনায়। আরশিনগর মূলত সেই অনুভব ও ভাবনার প্রকাশ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রকাশ অন্যের ভাবনাকে ছুঁয়ে যাবে কি না? স্পর্শ করবে কি না? আরশিনগর' সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছে বিপুল বিস্ময়ে। বছরের পর বছর পাঠকের অবিশ্বাস্য ভালােবাসায় সিক্ত হয়েছে এই উপন্যাস। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাে বেশি পাঠককে বদ করে চলেছে অদ্ভুত এই জীবন ও যন্ত্রণার আখ্যানে। একজন লেখক হিসেবে আমাকেও পৌঁছে দিয়েছে বিস্তৃত পরিসরের পাঠকের কাছে। এসব কারণেই এই উপন্যাসটির প্রতি কিছুটা পক্ষপাতিত্ব কিংবা দুর্বলতা আমার রয়েছে। ফলে সবসময়ই চেয়েছি বইটি আরাে যত্ন করে প্রকাশ করতে। সেই চাওয়া থেকেই এবার অন্যধারা থেকে প্রকাশিত হয়েছে আরশিনগর। গল্প অপরিবর্তিত থাকলেও এই সংস্করণে শব্দ ও বর্ণনায় সামান্য পরিমার্জনা রয়েছে। প্রচ্ছদেও রয়েছে ভিন্নতা। আশা করছি, আরশিনগর আরাে বেশি পাঠকের কাছে পৌছে যাবে। স্পর্শ করবে অগণিত মন ও মানুষ, ভাবনার ভুবন। পাঠকের জীবনের গল্প ও গল্পের জীবনে যে স্পন্দন তুলেছে এই উপন্যাস, সময়ের বাহনে চেপে তা আরাে বেশি আলােড়িত করবে, প্রবল ঢেউ তুলবে অনুভবের সমুদ্রে।
স্নাতকোত্তর, নৃবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। সাদাত হোসাইন নিজেকে বলেন গল্পের মানুষ। তাঁর কাছে চারপাশের জীবন ও জগত, মন ও মানুষ সকলই গল্প। তিনি মনে করেন, সিনেমা থেকে পেইন্টিং, আলোকচিত্র থেকে ভাস্কর্য, গান থেকে কবিতা- উপন্যাস-নাটক, সৃজনশীল এই প্রতিটি মাধ্যমই মূলত গল্প বলে। গল্প বলার সেই আগ্রহ থেকেই একের পর এক লিখেছেন- আরশিনগর, অন্দরমহল, মানবজনম, নিঃসঙ্গ নক্ষত্র, নির্বাসন, ছদ্মবেশ, মেঘেদের দিন ও অর্ধবৃত্তের মতো তুমুল জনপ্রিয় উপন্যাস। ‘কাজল চোখের মেয়ে’, তোমাকে দেখার অসুখ'সহ দারুণ সব পাঠকপ্রিয় কবিতার বই। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বোধ, দ্য শুজ, প্রযত্নের পাশাপাশি' নির্মাণ করেছেন 'গহীনের গান' এর মতো ব্যতিক্রমধর্মী পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চমিবঙ্গের চোখ সাহত্যি পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক- অন্যদিন হুমায়ূন আহমদে সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার, কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে।